পালে বাঘ
আজ সকালে আনন্দবাজার পত্রিকা জানালেন বাংলাদেশে রামকৃষ্ণ
মিশনের জনৈক সাধুকে মেরে ফেলার এবং পারলে কুচি কুচি করে কেটে ফেলার হুমকি দিয়েছে একটি
জঙ্গি সংগঠন। একেবারে নিজেদের লেটারহেডে চিঠি। সকালের চা-বিস্কুটের
পাশে বাঙালির আজ এটাই টপ স্টোরি। সেই খবরে
নাকি ভারতবর্ষের মন্ত্রী কুলে (মুখ্য+প্রধান) একেবারে
হুলুস্থুল পড়ে গেছে। না, আনন্দবাজার আমাদের পিছিয়ে পড়তে একেবারেই দিচ্ছেন না। ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়ে কপি ছাড়ার সুযোগ তাঁরা ছাড়েন নি।
এটা ঠিকই যে বাংলাদেশে বিগত চার বছরে ২০ জনের বেশী মানুষ
এই ধরণের ধর্মীয় হিংসার বলি হয়েছেন। তাঁদের কেউ
ছিলেন ব্লগার, কেউ অধ্যাপক,কেউ সঙ্খ্যালঘু সম্প্রদায়ের এবং কেউ বিদেশী। পুলিশ এবং প্রশাসন কোনও দিক থেকেই এই সমস্যাটি সমাধানের সদিচ্ছা
প্রমাণিত হয় নি। ধর্ম যখন
দেশ শাসনের যন্ত্র তখন এরকমটাই হয়ে থাকে। গুজরাত কিংবা মুজফফরনগরের দিকে খোলা চোখে তাকালেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। ধর্ম আসলে আমাদের অন্ধ করে দিয়েছে। তাই চোখ খুলেও কিছু দেখতে পাচ্ছি না।
তবে, রামকৃষ্ণ
মিশনের সাধুদের প্রাণের ভয় নেই। তাঁরা তো
বৈদান্তিক। নশ্বর মনুষ্য জীবন হারানোর ভয় তাঁদের
শোভা পায় না। কি বলছেন, স্মার্ট ফোন এবং ব্যক্তিগত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোয়ানোর ভয়? ধুর পাগল, সবই তো মায়া! তবে কি বুঝলেন, ঐ মিশন শব্দটাতেই
যত ঝ্যামেলা। ‘মিশন ইম্পসিবল’ দেখেন নি? সবসময় একদম
জান হাতেলি পে। তবেই না
মিশন! মনে নেই আমেরিকায় রাখাল ছোঁড়া গুলো
দুমদাম গুলি চালিয়ে স্বামীজীর কেমন নার্ভ পরীক্ষা করেছিল? আর এটা তো একটা হাতচিঠি। স্বামীজী
বেঁচে থাকলে আবার কঠোপনিষদ থেকে পড়া ধরতেন। তখন গেরুয়া কাপড় হলুদ হয়ে যেত! খুব রাগী লোক ছিলেন কিনা!
বাংলাদেশের এই ২০টি হত্যার কোনটাই অবশ্য আমাদের এই প্রগতিশীল
পত্রিকার প্রথম পাতায় আসেনি। ব্যতিক্রম
হল আজকের এই খবর। কেউ হতাহত
হন নি। শুধু একটা লেটারহেডে হুমকি চিঠি। তাতেই প্রথম পাতার হেডলাইন! এটা কি রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতি বিশেষ জামাই আদরের ট্র্যাডিশন বজায় রাখার জন্যই করা
হল? ভারত সেবাশ্রম কিংবা লোকনাথ মিশনের
সঙ্গে এই ব্যাপার ঘটলে এতটা বাজার গরম করতেন? প্রশ্ন এসেই যায়। এই হুমকি
চিঠির ব্যাপারটা অবশ্য এই অধম কে একটা অন্য ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছে। একেবারে দেজা ভু।
মাত্র কয়েক মাস আগেই বেলুড়ের একটি খেলার মাঠ সকৌশলে দখল
নেয় রামকৃষ্ণ মিশন। অনেক আটঘাট
বেঁধে, ক্লাবের মধ্যে বিভীষণ এবং দালাল ইমপ্লান্ট
করার পর একটি মোক্ষম চাল চালেন তাঁরা। প্রশাসনকে করুন স্বরে জানানো হয়, ক্লাবের
লোকজন নাকি বেলুড় মঠকে হুমকি দিচ্ছিলেন। সেই হুমকির প্রমাণ হিসেবে তাঁরা কি দেখান জানেন? সেই ক্লাবের লেটারহেডে লেখা একটি চিঠি। ভাবুন একবার? খেলার মাঠ হস্তগত করার জন্য, রোজ সন্ধে বেলা ‘খণ্ডন ভব
বন্ধন’ গাইতে গাইতে, কীরকম ফুল প্রুফ ছক কষেছিলেন তাঁরা।
আজ সকালে বাজারি হেড লাইন দেখে মনে হল তাঁদের সেই লেটারহেড
বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে। একেবারে
রাখালের পালে বাঘ পড়ার গল্প। আচ্ছা, এটাও আবার সাজানো কেস নয়ত?
image courtesy: blogs.timesofindia.indiatimes.com
Comments