গতি, স্থিতি ও পোগোতি



দুন এক্সপ্রেস দুলছিল সেই দুলুনিতে সে চলছে না থেমে আছে বোঝার উপায় ছিল না গতি এবং স্থিতির বোধ ছিল না আমিও জেগে আছি না ঘুমিয়ে তা বুঝতে পারছিলাম না সেই মুহুর্তে, সেই গতি-স্থিতির জোট আদপে একটা সমস্যা, না পরিস্থিতি, তাও বুঝতে পারছিলাম না ব্যাপারটা সমস্যা হয়ে থাকলে তার একটা সমাধান করা দরকার, এমন কোন তাগিদও ছিল না একটা চরম আলস্য কাজ করছিল অলসেরা যখন কাজ করে না, তখন আলস্য কাজ করে
 
আমার পাশের বার্থে নাক অবধি কম্বল চাপা দিয়ে শুয়ে থাকা বিজ্ঞানী বললেন, রেস্ট আর মোশন, কোনটাই অ্যাবসলিউট নয় কেবলই ফ্রেম অফ রেফারেন্স বুঝলে? না, বলতে গেলেও ঘাড় নাড়তে হবে, আর সেটাও একটা কাজ চরম আলস্যে সেটাও চেপে গেলাম যেই নাবলব, অমনি বোঝাতে আরম্ভ করবে তখন আবার না বুঝেও বুঝেছি বলতে হবে খুব চাপ বাপরে বাপ তার চেয়ে থাকো চুপচাপ
 
এখন, আমি আর একটা মৃতদেহে কোনও পার্থক্য নেই ভাগ্যিস বিজ্ঞানীর কথা না শুনতে পাওয়ার ভান করেছি! জেনে ফেললেই বিপদ! তখন ট্রেন কেন চলছে না, এই বলে যদি প্রবল আন্দোলন শুরু করি? বিস্তর খাটনি বেড়ে যাবে যে! পুলিশ আসবে, প্রেস আসবে; এমনকি প্রাণ সংশয়ও হতি পারে তার চেয়ে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকা ঢের ভাল ভায়া আমি জীবন্মৃত আমি জ্যান্ত লাশ 
    
বেশীক্ষণ অবশ্য সেই ইনারসিয়া টিকল না বিজ্ঞানীর জ্ঞান বর্ষণের সম্ভাবনায় যা হয় নি, এক বিচিত্র শব্দ প্রবাহে তা ঘটল জীবন্মৃত বাঙালি নড়ল নিচের বার্থে প্রবল ফোঁস ফোঁস শব্দে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতেই হল অজগর বা অ্যানাকোন্ডা ঢুকে পড়ল নাকি? ভারতীয় রেল, সবই সম্ভব রাসকিন বন্ডের দিব্যি যাই হোক, দেখি সাপ নয়, মানুষ দুই ভাই পাশাপাশি বসে বিপুল উদ্যমে বায়ু ত্যাগ এবং গ্রহণ করছেন না না, কেবলই নাক দিয়ে ত্যাগ আর তাতেই সেই ফোঁস এবং ফোঁস
 
বেশ কিছুক্ষন সেই বায়ু বিনিময় চলার পর এক ভাই চোখ খুললেন অন্য বায়বীয় ভাইটিকে শুধোলেন, হ্যাঁ রে, শরীরটা কীরকম ঠাণ্ডা হয়ে গেল না? কেন জানিস? পোচুর অক্সিজেন নিলি তো গুরুজি বলেছেন, প্রত্যহ জোলির আটা এবং ঘি খাবি আর একঘণ্টা অনুলোম ক্যানসারও সেরে যাবে! বিজ্ঞানী ধড়মড় করে উঠে বসে জিগ্যেস করলেন, ভাই, এই জোলিটি কে? ভাই বললেন, অ্যাঞ্জেলিনা নয়, পতন জোলি  শুনে বিজ্ঞানী চোখ কপালে তুলে বললেন, তাই? মুগ্ধ বিস্ময়ে ভাইটি আবার বায়ুত্যাগ করলেন এবার অবশ্য নাক কিংবা মুখ দিয়ে নয়
 
বুঝলাম এ সাধারণ সর্প নয়, যোগসর্প তবে ঘুটঘুটানন্দের নয় রামদেবের প্রথম থেকেই দাড়ি গোঁফের দুর্ভেদ্য ঝোপের ফাঁক থেকে যিনি গোটা দেশকে চোখ টিপে চলেছেন উনি যতই বোঝাতে চাইছেন উনি মস্করা করছেন, আমরা ততই ওনাকে সিরিয়াসলি নিচ্ছি

কিন্তু আমি যে জীবন্মৃত তাই আমি কিছুই বললাম না ট্রেন এবং ব্রেন দুটোই দুলছে চলছে না
আচ্ছা, আপনিও কি আমারই মত? জীবন্মৃত? তা না হলে প্রগতি আর পোগোতির পার্থক্য নিশ্চয়ই বুঝতে পারতেন
 photo courtesy: slate.com

Comments

Popular posts from this blog

Across The Sahara on a Bicycle

To the Mountains of the Moon: A Journey from Fiction to Facts

Straight from a Story Book: Part I