Wednesday, June 22, 2016
সকলের জন্য বই
শিশুটি বলেছিল, এমন একটা দিন আসবে যেদিন এই পৃথিবীর সকলের হাতে একটি বই থাকবে। এমন একটি বই, যার পাতা ওলটালে, প্রত্যহ, প্রত্যেকে নিজের ছবি দেখতে পাবে। সেই বইয়ের মধ্যে পাঠকের সুখ, দুঃখ, আশা, হতাশা, জন্ম, মৃত্যু হুবহু ফুটে উঠবে। একটিই বই সকলের জন্য। অথচ সকলেই ভাববে এটি তার একান্ত নিজস্ব। সকলেই তাকে নিজের মত করে মলাট দেবে, মনের মত করে সাজাবে। সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকবে। ওয়ান বুক টু বাইন্ড দেম অল। ওয়ান বুক টু রুল দেম।
শুনে পাদ্রী তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বলেছিলেন, আমি জানি তুমি কোন বইয়ের কথা বলছ বালক। মৌলবী সাহেব দাড়ি নেড়ে বলেছিলেন, ওহে পাদ্রী তুমি ভুল। তোমার ঐ বইটি আর চলে না। আমি জানি ওর ঠিক কোন বইটির প্রয়োজন। পণ্ডিত মশায় টিকিতে ওভারহ্যান্ড নট বাঁধতে গিয়ে স্মিত হেসে বলেছিলেন, কেউ কিস্যু জানে না। আমারটাই সর্ব শ্রেষ্ঠ।
শিশুটি সবাইকে চুপ করিয়ে দিয়ে হেসে উঠেছিল। তারপর বলেছিল, ধুর বোকার দল, আমি তো ফেসবুক-এর কথা বলছিলাম।
অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
(লেখকের মন্তব্যঃ আসলে শিশুটির স্বপ্ন শেষমেশ ফেসবুকে এসে ঠেকার মধ্যে একটা প্রেডিক্টেবিলিটি আছে। তাই কারো মনে হতেই পারে লেখাটা একটু জোলো। আমারও মন চাইছিল, শিশুটি এমন কিছু বলুক যাতে এই ধর্মান্ধ দুনিয়া একটু নাড়া খায়। কিন্তু, শিশুটি তেমন কিছু বলেনি। কারন, কেউ তেমন কিছু বলে, বা, করে উঠতে পারেন না আজকাল। হাতে পড়ে থাকে ফেসবুক।
আমার কাছে আসলে এই প্রেডিক্টেবিলিটি-টাই একটা চরম পরিহাস, একটা স্যাড রিয়ালিটি মনে হয়েছে। এর থেকে দুঃখজনক আর কিই বা হতে পারে! বিশেষ করে যেখানে অনেক সম্ভাবনা লুকিয়ে ছিল! )
image courtesy:ratracetrap.com
এক মিনিটের রাগ প্রস্তাব
১৯৪৩। লাট
সাহেবদের জন স্বাস্থ্য বিভাগ একটি সংখ্যা জানালেন। ১৮৭৩৭৪৯। তারপর সেই সংখ্যা থেকে একটি গড় সংখ্যা
বিয়োগ করে দিয়ে বললেন, আসলে হল, ৬৮৮৮৪৬, হাতে রইল পেনসিল। দুর্ভিক্ষে মাত্তর এই কজন মারা গেছে। বাকিটা ফি বছর এমনিই টেঁসে যায়। তোমরা খপর রাকো না। আমরা হলাম গিয়ে দুর্ভিক্ষ কমিশন। আমরা সব জানি।
টিম ডাইসন এবং অরূপ মহারত্ন (দি ডেমোগ্রাফি অফ
ফেমিনস) এই ব্যাপারটা নিয়ে একটু গবেষনা করে দেখলেন হিসেবে বেজায় গরমিল। দুর্ভিক্ষে
মৃতের সংখ্যা অন্তত ২১০০০০০। একুশ লাখ। পরবর্তি সময়ে অমর্ত্য সেন হিসেব করে বলেছেন
উঁহু, সংখ্যাটা ৩০০০০০০। তিরিশ লাখ।
ঐতিহাসিক পল গ্রিনো (প্রসপারিটি এন্ড মিসারি ইন
মডার্ন বেঙ্গল) আবার এরই মধ্যে বলে বসেছেন, ফেমিন কমিশনের কাছে ‘আসল’
সংখ্যাতত্ত্ব ছিল। ওঁরা চেপে গেছেন। এই
আসল সংখ্যাটি (৩১০০০০০, একত্রিশ লাখ) অনেক পরিশ্রম করে প্রস্তুত
করেছিলেন প্রশান্ত মহলানবিশ (মর্টালিটি ইন বেঙ্গল)। মহলানবিশের সার্ভের উপর ভিত্তি
করে পল গ্রিনো –র হিসেব দাঁড়িয়েছিল ৩৫ থেকে ৩৮ লাখ।
গোটা ভারতবর্ষে সেই সময় (১৯৪২) মৃত্যুর হার ছিল ২.১ শতাংশ। বাংলার আলাদা
করে কোন উল্লেখ ছিল না। মর্টালিটি
রেট ৬.৫ শতাংশ ধরেই মহলানবিশ তাঁর হিসেব পেশ করেছিলেন। (আর প্রসঙ্গান্তরে বলে রাখি, এ বছর এভারেস্ট
বিজয়ে গিয়ে বাংলার মৃত্যুর হার ৩৩.৩৩ শতাংশ) তবে একটা কথা সত্যি, ৩০ হোক বা ৩৫, এই গণিতে অপুষ্টিতে
মৃতের মাথা গোনা হয় নি। ধরলে, সেই সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৫৪০০০০০। চুয়ান্ন লাখ। এই গোটা
মাস মার্ডারের অধ্যায়টা দ্বায়িত্ব নিয়ে একাই লিখেছিলেন উইনস্টন চার্চিল ( বিষদে
জানতে মধুশ্রী মুখোপাধ্যায় এবং জনম মুখোপাধ্যায় পড়তে হবে)।
১৯৫৩। রানী এলিজাবেথ
মুকুট পড়ছেন। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছেন উইনস্টন চার্চিল
এবং ইন্দিরা গান্ধী। চার্চিল
শুধোলেন, তোমার বাবাকে খুব কষ্ট দিয়েছি বলে তুমি
নিশ্চয়ই ব্রিটিশদের খুব ঘেন্না কর? মুচকি হেসে
ইন্দিরা উত্তর দিলেন, না না , কোনদিনই আমরা আপনাদের ঘৃণা করিনি।
হাও কিউট!
চলুন, এক মিনিটের
রাগ প্রস্তাব করলাম। শোক তো সবসময়ই
করছেন। তবে সুগার আর পেসার থাকলে রাগ করবেন
না। মর্টালিটি রেট বেড়ে যাবে।
photo courtesy: yourstory.com
পালে বাঘ
আজ সকালে আনন্দবাজার পত্রিকা জানালেন বাংলাদেশে রামকৃষ্ণ
মিশনের জনৈক সাধুকে মেরে ফেলার এবং পারলে কুচি কুচি করে কেটে ফেলার হুমকি দিয়েছে একটি
জঙ্গি সংগঠন। একেবারে নিজেদের লেটারহেডে চিঠি। সকালের চা-বিস্কুটের
পাশে বাঙালির আজ এটাই টপ স্টোরি। সেই খবরে
নাকি ভারতবর্ষের মন্ত্রী কুলে (মুখ্য+প্রধান) একেবারে
হুলুস্থুল পড়ে গেছে। না, আনন্দবাজার আমাদের পিছিয়ে পড়তে একেবারেই দিচ্ছেন না। ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়ে কপি ছাড়ার সুযোগ তাঁরা ছাড়েন নি।
এটা ঠিকই যে বাংলাদেশে বিগত চার বছরে ২০ জনের বেশী মানুষ
এই ধরণের ধর্মীয় হিংসার বলি হয়েছেন। তাঁদের কেউ
ছিলেন ব্লগার, কেউ অধ্যাপক,কেউ সঙ্খ্যালঘু সম্প্রদায়ের এবং কেউ বিদেশী। পুলিশ এবং প্রশাসন কোনও দিক থেকেই এই সমস্যাটি সমাধানের সদিচ্ছা
প্রমাণিত হয় নি। ধর্ম যখন
দেশ শাসনের যন্ত্র তখন এরকমটাই হয়ে থাকে। গুজরাত কিংবা মুজফফরনগরের দিকে খোলা চোখে তাকালেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। ধর্ম আসলে আমাদের অন্ধ করে দিয়েছে। তাই চোখ খুলেও কিছু দেখতে পাচ্ছি না।
তবে, রামকৃষ্ণ
মিশনের সাধুদের প্রাণের ভয় নেই। তাঁরা তো
বৈদান্তিক। নশ্বর মনুষ্য জীবন হারানোর ভয় তাঁদের
শোভা পায় না। কি বলছেন, স্মার্ট ফোন এবং ব্যক্তিগত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোয়ানোর ভয়? ধুর পাগল, সবই তো মায়া! তবে কি বুঝলেন, ঐ মিশন শব্দটাতেই
যত ঝ্যামেলা। ‘মিশন ইম্পসিবল’ দেখেন নি? সবসময় একদম
জান হাতেলি পে। তবেই না
মিশন! মনে নেই আমেরিকায় রাখাল ছোঁড়া গুলো
দুমদাম গুলি চালিয়ে স্বামীজীর কেমন নার্ভ পরীক্ষা করেছিল? আর এটা তো একটা হাতচিঠি। স্বামীজী
বেঁচে থাকলে আবার কঠোপনিষদ থেকে পড়া ধরতেন। তখন গেরুয়া কাপড় হলুদ হয়ে যেত! খুব রাগী লোক ছিলেন কিনা!
বাংলাদেশের এই ২০টি হত্যার কোনটাই অবশ্য আমাদের এই প্রগতিশীল
পত্রিকার প্রথম পাতায় আসেনি। ব্যতিক্রম
হল আজকের এই খবর। কেউ হতাহত
হন নি। শুধু একটা লেটারহেডে হুমকি চিঠি। তাতেই প্রথম পাতার হেডলাইন! এটা কি রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতি বিশেষ জামাই আদরের ট্র্যাডিশন বজায় রাখার জন্যই করা
হল? ভারত সেবাশ্রম কিংবা লোকনাথ মিশনের
সঙ্গে এই ব্যাপার ঘটলে এতটা বাজার গরম করতেন? প্রশ্ন এসেই যায়। এই হুমকি
চিঠির ব্যাপারটা অবশ্য এই অধম কে একটা অন্য ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছে। একেবারে দেজা ভু।
মাত্র কয়েক মাস আগেই বেলুড়ের একটি খেলার মাঠ সকৌশলে দখল
নেয় রামকৃষ্ণ মিশন। অনেক আটঘাট
বেঁধে, ক্লাবের মধ্যে বিভীষণ এবং দালাল ইমপ্লান্ট
করার পর একটি মোক্ষম চাল চালেন তাঁরা। প্রশাসনকে করুন স্বরে জানানো হয়, ক্লাবের
লোকজন নাকি বেলুড় মঠকে হুমকি দিচ্ছিলেন। সেই হুমকির প্রমাণ হিসেবে তাঁরা কি দেখান জানেন? সেই ক্লাবের লেটারহেডে লেখা একটি চিঠি। ভাবুন একবার? খেলার মাঠ হস্তগত করার জন্য, রোজ সন্ধে বেলা ‘খণ্ডন ভব
বন্ধন’ গাইতে গাইতে, কীরকম ফুল প্রুফ ছক কষেছিলেন তাঁরা।
আজ সকালে বাজারি হেড লাইন দেখে মনে হল তাঁদের সেই লেটারহেড
বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে। একেবারে
রাখালের পালে বাঘ পড়ার গল্প। আচ্ছা, এটাও আবার সাজানো কেস নয়ত?
image courtesy: blogs.timesofindia.indiatimes.com
গতি, স্থিতি ও পোগোতি
দুন এক্সপ্রেস দুলছিল। সেই দুলুনিতে সে চলছে না থেমে আছে বোঝার উপায় ছিল না। গতি এবং স্থিতির বোধ ছিল না। আমিও জেগে
আছি না ঘুমিয়ে তা বুঝতে পারছিলাম না। সেই মুহুর্তে, সেই গতি-স্থিতির
জোট আদপে একটা সমস্যা, না পরিস্থিতি, তাও বুঝতে পারছিলাম না। ব্যাপারটা সমস্যা হয়ে থাকলে তার একটা সমাধান করা দরকার, এমন কোন তাগিদও ছিল না। একটা চরম
আলস্য কাজ করছিল। অলসেরা যখন
কাজ করে না, তখন আলস্য কাজ করে।
আমার পাশের বার্থে নাক অবধি কম্বল চাপা দিয়ে শুয়ে থাকা
বিজ্ঞানী বললেন, রেস্ট আর মোশন, কোনটাই অ্যাবসলিউট নয়। কেবলই ফ্রেম অফ রেফারেন্স। বুঝলে? না, বলতে গেলেও
ঘাড় নাড়তে হবে, আর সেটাও একটা কাজ। চরম আলস্যে সেটাও চেপে গেলাম। যেই ‘না’ বলব, অমনি বোঝাতে আরম্ভ করবে। তখন আবার না বুঝেও বুঝেছি বলতে হবে। খুব চাপ। বাপরে বাপ। তার চেয়ে থাকো চুপচাপ।
এখন, আমি আর একটা
মৃতদেহে কোনও পার্থক্য নেই। ভাগ্যিস
বিজ্ঞানীর কথা না শুনতে পাওয়ার ভান করেছি! জেনে ফেললেই বিপদ! তখন ট্রেন
কেন চলছে না, এই বলে যদি প্রবল আন্দোলন শুরু করি? বিস্তর খাটনি বেড়ে যাবে যে! পুলিশ আসবে, প্রেস আসবে; এমনকি প্রাণ সংশয়ও হতি পারে। তার চেয়ে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকা ঢের ভাল ভায়া। আমি জীবন্মৃত। আমি জ্যান্ত
লাশ।
বেশীক্ষণ অবশ্য সেই ইনারসিয়া টিকল না। বিজ্ঞানীর জ্ঞান বর্ষণের সম্ভাবনায় যা হয় নি, এক বিচিত্র শব্দ প্রবাহে তা ঘটল। জীবন্মৃত বাঙালি নড়ল। নিচের বার্থে
প্রবল ফোঁস ফোঁস শব্দে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতেই হল। অজগর বা অ্যানাকোন্ডা ঢুকে পড়ল নাকি? ভারতীয় রেল, সবই সম্ভব। রাসকিন বন্ডের
দিব্যি। যাই হোক, দেখি সাপ নয়, মানুষ। দুই ভাই পাশাপাশি বসে বিপুল উদ্যমে বায়ু ত্যাগ এবং গ্রহণ করছেন। না না, কেবলই নাক
দিয়ে ত্যাগ। আর তাতেই সেই ফোঁস এবং ফোঁস।
বেশ কিছুক্ষন সেই বায়ু বিনিময় চলার পর এক ভাই চোখ খুললেন। অন্য বায়বীয় ভাইটিকে শুধোলেন, হ্যাঁ রে, শরীরটা কীরকম ঠাণ্ডা হয়ে গেল না? কেন জানিস? পোচুর অক্সিজেন
নিলি তো। গুরুজি বলেছেন, প্রত্যহ জোলির আটা এবং ঘি খাবি আর একঘণ্টা অনুলোম। ক্যানসারও সেরে যাবে! বিজ্ঞানী ধড়মড় করে উঠে বসে জিগ্যেস করলেন, ভাই, এই জোলিটি কে? ভাই বললেন, অ্যাঞ্জেলিনা
নয়, পতন জোলি। শুনে বিজ্ঞানী চোখ কপালে তুলে বললেন, তাই? মুগ্ধ বিস্ময়ে
ভাইটি আবার বায়ুত্যাগ করলেন। এবার অবশ্য
নাক কিংবা মুখ দিয়ে নয়।
বুঝলাম এ সাধারণ সর্প নয়, যোগসর্প। তবে ঘুটঘুটানন্দের নয়। রামদেবের। প্রথম থেকেই
দাড়ি গোঁফের দুর্ভেদ্য ঝোপের ফাঁক থেকে যিনি গোটা দেশকে চোখ টিপে চলেছেন। উনি যতই বোঝাতে চাইছেন উনি মস্করা করছেন, আমরা ততই ওনাকে সিরিয়াসলি নিচ্ছি।
কিন্তু আমি যে জীবন্মৃত। তাই আমি কিছুই বললাম না। ট্রেন এবং
ব্রেন দুটোই দুলছে। চলছে না।
আচ্ছা, আপনিও কি
আমারই মত? জীবন্মৃত? তা না হলে প্রগতি আর পোগোতির পার্থক্য নিশ্চয়ই বুঝতে পারতেন।
photo courtesy: slate.com
Subscribe to:
Posts (Atom)
Discovering Ladakh’s Uncharted Petroglyphs : A Short Note
Whispers on Stone: Discovering Ladakh’s Uncharted Petroglyphs We were trudging down a dusty trail by the frozen stream near the little v...

-
Across The Sahara on a Bicycle Between the things we get And the things we celebrate Flows a desert ...
-
In 1937, Bibhutibhushan Bandyopadhyay chronicled the adventures of a Bengali boy named Shankar. This novel was named 'Chander Pahar'...
-
It all started with a story book. In 1937, Bibhuti Bhushan Bandyopadhyay , one of the leading writers of modern Bengali literatu...