Thursday, October 20, 2022

Prayers, silent prayers, screaming inside your tiny little head

On 4th October, 2022, I was standing below this, not by accident, but by choice. It certainly was not my first close encounter with an ice-fall. And that is precisely why I was afraid. How many times can one squeeze through an ice-fall and come out unscathed? It is a game of Russian roulette baby! It is only a matter of time before it gets you. 

I was belaying Lakpa and he was climbing fast. We were searching for a passage to the higher ground and this seemed to be the only gateway. I was there below this particluar serac probably for 10 mins or may be it was slightly more. But boy it seemed like eternity. 

Suddenly it seemed the seracs around us were collapsing in real time. They were crashing around us like little thunders. I could feel the vibration of the rumbling avalanches on the tiny belay stance of mine. Gosh the stance was littered with debris too. 

What were we doing there? Our morning's boldness was quickly evaporating. Caught red-handed, we were the trespassers in this forever disintegrating theater.  

These towers of ice were shattering when Shipton and Tilman passed through here in 1934. They scared the death out of Ruttledge's party in 1932. Yet on that morning of 4th October, 2022, their little game of manic perpetual disintegration seemed far from being over. 

I suddenly remembered Ruttledge's warning. Tilman's too. And out of the blue I remembered Ian Clough. Seracs collpase and climbers die. It is a fact. 

And then I prayed for our dear lives. "Not here, not now, not like this!"

That is all I could do. Other than trying to climb faster of course. 

Are we ever ready to accept death? We and our perverted will-to-live even while on a death row. 

##################################################################################

Five days after this, when we reached Bageswar, we learnt about the tragedy on Draupadi Ka Danda II. We were shocked, silenced. Incidentally, that was 4th October too. 


Tuesday, October 18, 2022

बेवकूफों का आक्रमण



যারা পর্বতারোহণের একটা যুগ দূরের কথা, যোজন দেখেননি তাঁরাই আজকাল কথায় কথায় অমুক ক্লাইম্বটা যুগান্তকারী, তমুকটা ঐতিহাসিক বলে বজ্র নির্ঘোষ আরম্ভ করেছেন। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় করেছেন, যেমনটি তাঁরা করেই থাকেন। তাতে কোন সমস্যা ছিল না। কারণ দেখা যায় এই টাইপের নিষ্পাপ নির্বোধদের ঘোষণায় যাঁদের বিশেষ শিহরণ হয় তাঁরা বেশীরভাগই জীবনে এক পিচও ক্লাইম্ব করেননি। এরা সবেতেই হয় উদ্বেলিত উচ্ছ্বাসে হাততালি দেন, নয় ঘৃণার বিষ ছড়িয়ে দেন। এনারা সব কিছুরই বিশেষজ্ঞ, নিজেদের ফোনের এজলাসে এনারা নিজেরাই সাক্ষী, নিজেরাই বিচারপতি। 

কিন্তু আজকাল এরকম ঘোষণায় খবরের কাগজ টিভিও নড়েচড়ে বসেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় যার তার প্রলাপ থেকে খামচা মেরে খবর  বানিয়ে দেবার ব্যাপারটাও আজকাল নর্মাল ব্যাপার-তা সে সেলিব্রিটি গসিপ কিংবা একটা ক্লাইম্ব - যাই হোক না কেন। 

একো সাহেব সঠিক একেবারেই। 

তবে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব যদি ফোনের স্ক্রিনেই সীমাবদ্ধ থাকত তাহলে ভাল হত। "কিন্তু সেটি হচ্ছে না। সে হবার যো নেই।" 

অতএব নিজের চরকায় তেল এবং ক্র্যাম্পনে ধার দেওয়াটাই বেস্ট পলিসি। 


 

Sunday, August 28, 2022

চ্যাটারটন মারা গেছেন, চ্যাটারটন আবার মারা যাবেন

দি ডেথ অফ চ্যাটারটন, ১৮৫৬, হেনরি ওয়ালিস 


সারাদিন ধরে আমার ঘরের দেওয়াল, জানলার পাল্লা, 
পায়া-ভাঙা চেয়ার, স্তূপাকৃতি ধুলো-ঢাকা প্রাচীন আসবাব-
সব কিছু দেখি আমি। 

সত্যি, আমাদের সব কিছু পুরোনো, ধুলোপড়া, ভাঙাচোরা। 
তবু একটা ক্লান্ত, মলিন লাবণ্য যেন রয়েছে কোথাও। 
ঠাম্মার আদরের মত,
লেপ্টে রয়েছে সবকিছুর গায়ে।  

একদিন এই ঘরে বাবা-মা থাকত। 

এখন এই ঘরে আমি থাকি। 

আমি চলে যাবার পর হয়ত অন্য কেউ থাকবে। 

তার চোখে এই লাবণ্য দেখা দেবে কী? মলিন হয়েও দেখা দেবে কী? 

অবশ্য, না দিলেই বা কী আসে যায়! 

চ্যাটারটন মারা গেছেন, চ্যাটারটন আবার মারা যাবেন।  


Tuesday, August 23, 2022

'বাংলার পর্বতারোহণের ঘোলা জলে মাছ ধরা কী যার তার কর্ম?'

গত ২০ আগস্ট, ২০২২, ড্রিম ওয়ান্ডেরলুস্ট এবং 'কলকাতা প্রকৃতি পরিব্রাজক সমিতি'র সদস্যগণ- যৌথ উদ্যোগে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন। আলোচনার বিষয় ছিল- 'কোন পথে বাংলার পর্বতারোহণ'।  বিষয় শিরোনামের শেষে জিজ্ঞাসার চিহ্ন, কিংবা বিস্ময় সূচক চিহ্ন- দুটোর কোনটাই না থাকায়  একটা ব্যাপার আঁচ করে নেওয়া যেতে পারে এবং সেটা হল আয়োজকদের মনে পশ্চিমবাংলার পর্বতারোহণের গতিপ্রকৃতি সম্বন্ধে একটা সংশয় থাকলেও ( সংশয় নিশ্চয়ই ছিল, তা না হলে খামোখা এরকম একটা সভা ডাকতে যাবেন কেন?), তাঁরা সেটা সদর দরজায় লিখে দিতে চাননি। মানে, একটা মাছ ধরার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু নিজেরা জলে নামতে ( কিংবা ছিপ ফেলতে) তাঁরা রাজী ছিলেন না। সে দ্বায়িত্ব স্বাভাবিকভাবেই ছিল নির্বাচিত বক্তাদের ঘাড়ে। 

নিজেরা চিহ্নিত মাউন্টেনিয়ার না হয়েও, এরকম একটা দুঃসাহসিক উদ্যোগের জন্য আয়োজকদের আমি সাধুবাদ জানাই। একটা কথা স্পষ্ট- আয়োজকদের এই কৌতূহল ( মানে, 'কোন পথে যাচ্ছে ব্যাপারটা'? গোল্লায়? না, কেবলই পারস্পরিক তোল্লায়?) প্রসূত হয়েছে তাঁদের হিমালয় এবং পর্বতারোহণের প্রতি আন্তরিক ভালবাসা থেকে। কিন্তু একথা ভুললে চলবে না- বাংলার পর্বতারোহণের জলটি ঘোলা এবং সেই ঘোলা জলে মাছ ধরা কী যার তার কর্ম?  বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘোলা জলে পুঁটি কিংবা রুই - এই জাতের মাছই ধরা পড়ে বেশী। কিন্তু বাংলার পর্বতারোহনের ঘোলা জলে যে রাঘব বোয়ালরা ( এবং কিছু মবি-dick, কিংবা মন্টি পাইথনে উল্লিখিত ' Biggus Dickus'  ) চিরকাল দাপিয়ে বেড়ান- তাঁদের ধরা কোনও ক্যাপ্টেন আহাব রূপী আলোচনা সভারই সাধ্য নয়। 

ঘটনাচক্রে, সেই সভায় আমন্ত্রিত বক্তাদের তালিকায় আমার নামও ছিল। ভাবুন কাণ্ড! প্রাথমিক ভাবে, ২০ তারিখ দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর যেহেতু আমার আর কোন কাজ ছিল না তাই ব্যক্তব্য রাখতে রাজী হয়ে গেছিলাম । আমার বিচিত্র কৌতুকবোধকে মাফ করবেন। আসলে আমি বক্তব্য রাখতে রাজী হয়েছিলাম একটাই কারণে-for posterity। 

যে সম্প্রদায় তাঁদের সমস্যাটা কী, সেটা বুঝেও বুঝতে চান না- তাঁরা ভাবের ঘরে চুরি করে থাকেন এবং তাঁদের গুড়ে পুরোটাই বালি। তবুও, আয়োজকদের সম্মানার্থে আমি  খুব সিরিয়াসলি ১৪ মিনিটের একটা 'আর্গুমেন্ট'-ও পেশ করেছিলাম- করেছিলাম পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভেবে।  

মনে রাখবেন একটা ১৪ মিনিটের টকে বিষয়বস্তুর চুল চেরা বিশ্লেষণ সম্ভব হয়নি ( আমার দ্বারা হয়নি), তাই খানিক সরলীকরণ থেকেই গেছে। এ বিষয়ে একটা গোটা বই লিখে ফেলা সম্ভব, কিন্তু সে ইচ্ছা আমার মোটেই নেই। তবে আঁতে ঘা যাঁদের লাগার ( জুমারিস্ট, ক্লাবের পেট মোটা কর্মকর্তা, এভারেস্টের সোনার টুকরো ছেলে/মেয়ে) তাঁদের লাগবে। সেটাই উদ্দেশ্য ছিল।  পাণ্ডিত্য ভাল, তবে ক্লাইম্বিং ক্রাফটটা আগে শেখার মত করে শিখুন, একটু একটু করে নিজেদের উন্নত করুন, তারপর নিজের দমে ক্লাইম্ব করুন। এটুকুই বলতে চেয়েছি দাদাগো।  

টুরিস্ট এবং ক্লাইম্বার- একই বৃন্তে দুইটি কুসুম কখনই নয়। হাতি যে কারণে অ্যাসপিরিন নয়- সেই কারণেই নয়। সেটাই এই টকের মোদ্দা কথা।



ঘনিষ্ঠ দুয়েকজনের অনুরোধে আমার সেদিনের বক্তব্য  এই ব্লগে দিলাম। আমার 'আর্গুমেন্ট' কিছু স্লাইড সহযোগে ছিল। সেই স্লাইডগুলি কখনও রূপকার্থে, কখনও আক্ষরিক অর্থে রাখা হয়েছিল। লেখার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সেই স্লাইডগুলিও এখানে দিলাম। প্লেজিয়ারিজমের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে জেনেও দিলাম।  


(প্রথম কয়েকটা লাইন ছিল আমার সেদিনের পূর্ব-কথন। তারপর, ১, ২ করে স্লাইড অনুসারে ব্যক্তব্য।)  

কোন পথে বাংলার পর্বতারোহণ   -অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় 

Arguably, এই পশ্চিমবাংলায় পর্বতারোহণের জন্ম পঞ্চাশের দশকে, এই পশ্চিমবাংলা থেকে ষাটের দশকেই All Female Mountaineering Expedition হয়েছিল। তারপর পুরোদস্তুর একটা all-female mountaineering club ও ছিল। এখনও বাংলার মেয়েরা mountaineering করে। তাই আমার মনে হয় আজকের বক্তাদের মধ্যে অন্তঃত ৫০ শতাংশ মহিলা থাকা উচিৎ ছিল। কিন্তু আজ বক্তাদের মধ্যে একজনও মহিলা পর্বতারোহী নেই। কেন নেই, সেটা নিয়ে ভাবা দরকার, নিজেদেরকে প্রশ্ন করা দরকার বলে আমার মনে হয়। কিন্তু আজ যেহেতু সময় সীমিত- তাই আমাকে নিজের ব্যক্তব্য শুরু করতে হচ্ছে।     


১- দাম্ভিক আত্মপ্রচার মনে হতে পারে, কিন্তু খানিকটা বাধ্য হয়েই নিজের ঢাক পেটানো দিয়ে আরম্ভ করছি। তার কারণ, এখানে উপস্থিত অধিকাংশ মানুষই আমার কাজ সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানেন না। জানার কথাও না, কারণ আমি স্বনামধন্য কেউ নই এবং বাংলার পর্বতারোহণের পটভূমিকায় নিজেকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ লোক বলে আমি মনে করি না। তবে আজকের আলোচনা সভায় যেহেতু আমি একজন আমন্ত্রিত বক্তা- তাই হযবরল-র শ্রী ব্যাকরণ শিং (বি. . খাদ্যবিশারদ)-এর মত বলতে ইচ্ছে করছে- উপস্থিত বালকবৃন্দ স্নেহের হিজিবিজ্বিজ্‌, আজ অনেক বছর বাদে তোমাদের সঙ্গে দেখা হয়ে বড় ভালো লাগছে এই বছর উৎকৃষ্ট খাদ্য গবেষণার কারণে প্রবাসী হতে হয়েছিল আবার ফিরে এসেছি


- জোকস অ্যাপার্ট- আজ থেকে ২১ বছর আগে আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম হিমালয়কেই নিজের জীবন করে নেব বলে। ব্যাপারটা খুব ইউটোপিক শোনাচ্ছে তো? কিন্তু এটাই ঘটেছিল। হিমালয় নিয়ে কী করে জীবন কাটাবো? আমার তো বাপের জমিদারি নেই? নায়েব মশাই খাজনা তুলে আনেন না। তবু একদিন সেই ঝাঁপ দিয়েছিলাম। আসলে হিমালয়ের টান এত ভয়ংকর ছিল যে ঝাঁপ না দিয়ে পারিনি। আর্থিক নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্ক সেই যে শেষ হয়েছিল- আজও তা ঠিক হয়নিকাজ শুরু করেছিলাম ট্রেকিং গাইডের মত করে- দল নিয়ে সন্দকফু-কেদারতাল- এইরকম আর কি! সেদিন এই কলকাতারই কিছু লোকজনকে বলতে শুনেছিলাম- ‘সুজলদার ভাইপো পাহাড় ভালবাসে না- পাহাড় নিয়ে ব্যবসা করে’ তবে আজ বলতে দ্বিধা নেই, গত বিশ বছরের জীবনে কবির ভাষায়- “যা দেখেছি যা পেয়েছি/ তুলনা তার নাই ভাগ্যিস ঝাঁপ দিয়েছিলাম!



-যেহেতু আজকের বিষয় পর্বতারোহণ কেন্দ্রিক- তাই সাইক্লিং, ব্যাকপ্যাকিং এবং আমার অন্যান্য অ্যাডভেঞ্চারের কথা আজ তুলছি না। গত ২১ বছরে, ভারতীয় হিমালয়ে আমি ৬০টি মাউন্টেনিয়ারিং এক্সপিডিসনে অংশ নিয়েছি- তার ৯০ শতাংশই আমার নিজের planned- organised এবং আমি নিজে সবকটিতে ক্লাইম্বিং লিড করেছি এবং গাইডের কাজ করেছিএগুলো সবই ছিল বিদেশী অভিযান এবং দলের সদস্যরা টুরিস্ট নয়- ক্লাইম্বার বিদেশীদের ক্লাইম্বিং গাইডের কাজ করতে গেলে ক্লাইম্বিংটা সত্যি সত্যি জানতে হয়, সাইড লাইনে বসে বক্তৃতা দিয়ে পার পাওয়া যায় না, শারীরিক সক্ষমতার কথা নাহয় বাদই দিলাম। ক্লাইম্বিং অভিযানের পাশাপাশি আমি অগণিত ট্রেকও লিড করেছি এবং দীর্ঘ ৫ বছর আমি ডগ স্কটের ট্রেক দলগুলির গাইড হিসাবে কাজ করেছি। হ্যাঁ-ঠিকই শুনছেন- ডগ স্কট। উনি আমাকে খুবই স্নেহ এবং ভরসা করতেন।   



৪- হিমালয়ে বেশ কিছু নামকরা পিকে গেলেও বরাবরই আমার আগ্রহ এক্সপ্লোরেটরি অভিযানে বেশী হিমালয়ের বাইরে আমি গ্রিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, সুইস এবং ফ্রেঞ্চ আল্পস, উত্তর আমেরিকায় সিয়েরা ক্যাসকেড, কিরগিজস্তান এবং পেরুতে ক্লাইম্ব করেছি। এলব্রুসে স্পিড ক্লাইম্বিং প্রতিযোগিতায় খারাপ ফল করিনি। কেনিয়ায় বিগ ওয়াল ক্লাইম্ব করেছি। কখনও সামিট হয়েছে- কখনও হয়নি তবে বড় মুখ করে এইসব বলার কারণ কী জানেন? এগুলোর কোনটাই কোন ট্রাভেল এজেন্সির প্যাকেজ ছিলনা। সব ক্লাইম্বই ছিল নিজের দমে করা।



৫- হ্যাঁ, নিজের ঢাক পেটানো দিয়ে আমি একটা কথাই বলতে চাইছি- এবং তা হল, আজকের আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে এই বক্তার একটা সম্যক ধারণা রয়েছে। দু-দশকের কাজের মধ্য দিয়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি, গ্রো করেছি এবং একটা ধারণা অর্জন করেছি। ব্যক্তব্যের গোড়াতেই শ্রোতাকে এটুকু জানিয়ে রাখা আমার জরুরী মনে হল। এবার আজকের প্রসঙ্গে আসি।



৬- পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে, ইওরোপ-আমেরিকার পাহাড়িয়াদের আড্ডায়, একটা সম্ভাবনার কথা শোনা যেত শোনা যেত, হিমালয় এবং কারাকোরামের উচ্চতম সবক’টি পাহাড় ক্লাইম্ব হয়ে গেলেই নাকি, পর্বতারোহণের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে তখন আর হাল্লা-চলেছে-যুদ্ধের কায়দায় বিশাল আকার-প্রকারের অভিযান সংগঠিত হবে না তখন কেবল গুটিকয় বন্ধু, অপেক্ষাকৃত ছোট পাহাড়ে, কঠিনতর ক্লাইম্বিং চ্যালেঞ্জের সন্ধানে পাড়ি দেবে। নিজেদের দেশের পাথর-বরফে ঘষা খেয়ে প্রতিনিয়ত উদ্ভাবিত হয়ে চলা নতুন ক্লাইম্বিং পদ্ধতি, শৈলী এবং সরঞ্জামের যথার্থ প্রয়োগের ক্যানভাস খুঁজে বেড়াবে এই নতুন প্রজন্মের পর্বতারোহীরা- হিমালয় এবং কারাকোরাম জুড়েবলা হত, আফটার অল, ক্লাইম্বিং ইস অলসো আ ফর্ম অফ আর্ট এবং আর পাঁচটা আর্ট ফর্মের মতোই পর্বতারোহণও বিবর্তিত, উন্নত, আধুনিক হবে এবং মানুষকে ভাবতে বাধ্য করবে



- ১৯৫৬ সালে, মুজতাঘ টাওয়ারে ব্রিটিশ অভিযানের সাফল্য দেখিয়ে দিয়েছিল কারাকোরাম বা হিমালয়ের মতো প্রত্যন্ত পর্বতমালায়, ৭০০০ মিটারের শৃঙ্গে, কলোনিয়াল ঘরানার বাহুল্য বর্জন করেও অতি উচ্চ মানের টেকনিকাল ক্লাইম্বিং কী ভাবে করা যায় ট্রেভর ব্রাহাম লিখেছিলেন, “১৯৭০ সালের অন্নপূর্ণা সাউথ ফেস ক্লাইম্বের থেকেও, সময় এবং পরিস্থিতির বিচারে ১৯৫৬ সালের এই ক্লাইম্ব প্রকৃত অর্থেই পথপ্রদর্শক ছিল” তার ঠিক পরের বছরই আর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল ব্রড পিকে। অস্ট্রিয়ার এই দলে ছিলেন মাত্র চারজন ক্লাইম্বার। কোনও শেরপা, হাই-অল্টিচিউড পোর্টার ইত্যাদি ছাড়াই ব্রড পিক ক্লাইম্ব করেই তাঁরা থেমে থাকেননিদল এবার দু’ভাগে ভাগ করে নিয়ে তাঁরা দু’টি ভিন্ন শৃঙ্গে আরোহণ শুরু করেছিলেন। দু’জন গেছিলেন ৭৪২০ মিটারের এক অনামা শৃঙ্গে, আর অন্য দু’জন চেষ্টা করেছিলেন চোগোলিসা (৭৬৫৪ মিটার) ক্লাইম্ব করারএই দ্বিতীয় দলে ছিলেন হারমান বুল এবং কুর্ট ডিয়েমবার্গার। দুর্ভাগ্যক্রমে এই চোগোলিসাই ছিল প্রবাদপ্রতিম হারমান বুলের শেষ ক্লাইম্ব। কিন্তু, সামিট রিজের কর্নিস ভেঙে বুলের মতো পর্বতারোহীর মৃত্যুর পাশাপাশি যে-স্বপ্নটা বিশ্বের পর্বতারোহীদের মনে দানা বাঁধতে শুরু করেছিল, তা হল— কয়েকজন বন্ধু মিলে হিমালয়-কারাকোরামের মতো বৃহত্তর পর্বতমালায় গিয়ে তাহলে কেবল একাধিক টেকনিকাল পিকই নয়, আট হাজারি শৃঙ্গও ক্লাইম্ব করা সম্ভব।



৮- এই চালচিত্র থেকে জাম্প-কাট করে যদি চলে আসি ১৯৮১ সালে, নন্দাদেবী স্যাংচুয়ারির দক্ষিণ দেওয়ালে, তাহলে দেখতে পাব বিদ্যুৎ সরকারের নেতৃত্বে মাইকতোলি সহ মোট তিনটি বাইশ হাজার ফুটের শিখর আরোহণ করছেন গৌতম দত্ত এবং অমূল্য রায়। করছেন কোনও শেরপা কিংবা হাই-অল্টিচিউড পোর্টারের সাহায্য ছাড়াই। দেখতে পাব, রামধনুর দুই প্রান্তের মতোই কারাকোরামে হারমান বুলের জন্ম দেওয়া স্বপ্নের ক্লাইম্বিং ঘরানা এবং দর্শন মিলেমিশে এক হয়ে যাচ্ছিল বাংলার এই ক্লাইম্বারদের আইস-অ্যাক্সে ভর করে।



৯-ষাটের দশকের শেষ দিকে এই সম্ভাবনার রশ্মি আমাদের এই পশ্চিমবঙ্গেও এসে পৌঁছেছিল। ক্লাইম্বিং জগতের হাঁড়ির খবর বাংলার কিছু ক্লাইম্বার তখনই রাখতেন। সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে আশির দশক জুড়ে বাংলায় এসেছিল হিমালয়ের ক্যানভাসে অ্যাল্পাইন স্টাইলে পর্বত আরোহণের আর্ট এবং শেরপাদের কাঁধে ভর না করে নিজেদের ক্ষমতায় শিখর আরোহণের প্রচেষ্টা। শিপটন-টিলম্যানের মতো, আটা ভাজা, ছাতু আর পাটালিগুড়ে হিমালয় ডিঙোনোর শক্তি, ’৭০-’৮০র দশকের একঝাঁক বাঙালি ক্লাইম্বাররাও আপন করে নিয়েছিলেন।



১০-অথচ আজ, এই ২০২২-এ দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতেই হয় যে, পর্বতারোহণের আধুনিক ধারায় পা রেখে নতুন অধ্যায়ের সূচনা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি- -বরং তৈরি হয়েছে একটা কনফিউশন।  কারণ হল, বিগত দুই দশকে জমিতে বেনো জল ঢুকেছে বাঁধভাঙা বন্যার মতোফলে, নবাগতের পদার্পণ এবং যথাসময়ে উত্তরণের মুখ্য দার্শনিক শর্ত এবং তার উদ্দেশ্যের বিশুদ্ধতা- বিষিয়ে গেছে। হিলারি, মেসনার থেকে স্টিফেন ভেনাবলস— এঁরা সকলেই সহমত এই একটা ব্যাপারে। লেট মি এক্সপ্লেন।  



১১- নব্বইয়ের দশক থেকে সেই যে মাউন্ট এভারেস্টের গায়ে ‘ফর সেল’ তকমা লেগেছিল আজ তা এক মহামারীর রূপ নিয়েছে। প্রথমে বাছা বাছা কিছু পাহাড়কে (যেমন কিলিমানজারো, ম্যাটারহর্ন, আকোঙ্কাগুয়া, এলব্রুস এবং মাউন্ট এভারেস্ট) ব্র্যান্ডিং করা হয়েছিল এবং তাদের পণ্য করে ইওরোপ এবং আমেরিকায় একের পর জন্ম নিয়েছিল অ্যাডভেঞ্চার বেচার কোম্পানি— অ্যাডভেঞ্চার কনসালট্যান্টস, মাউন্টেন ম্যাডনেস, জ্যাগেড গ্লোব ইত্যাদি তারপর, কয়েক বছর যেতে না যেতেই জন্ম নিয়েছিল অপেক্ষাকৃত সস্তা দামের (এবং নিম্ন মানের)স্থানীয় কোম্পানিগুলি এভারেস্ট এবং সমগোত্রীয় সব ক’টি শৃঙ্গ পরিণত হয়েছিল ইন্ডাস্ট্রিতে বলা হয়েছিল, স্বপ্ন সম্ভবের যুগ এসেছে, ফেলো কড়ি চড়ো এভারেস্ট— ব্যস, তুমিও রাতারাতি পরিচিত হবে অভিযাত্রী হিসেবে বলা বাহুল্য, এমন বিজ্ঞাপনে এসেছিল প্রবল সাড়া তারপর সেই খদ্দের ধরে রাখতে, কয়েক বছর পার হতে না হতেই প্রয়োজন হয়েছিল ব্র্যান্ড এক্সটেনশনের ফলে সৃষ্টি হয়েছিলসেভেন সামিটস’, ‘এক্সপ্লোরার্স গ্র্যান্ড স্ল্যামগোছের গালভরা নামের প্যাকেজ ট্যুর প্রথম দিকে এই সব বিজ্ঞাপনের টার্গেট অডিয়েন্স সীমাবদ্ধ ছিল আর্থিক ভাবে সচ্ছল প্রথম বিশ্বের মানুষজনের মধ্যে এভারেস্টের এমআরপি ৬৫ হাজার ডলার ছুঁয়েছিল



১২- আর এখন বাংলার গ্রামের ছেলে বা মেয়েটি তার মায়ের গয়না, বাপের জমিজমা বন্ধক দিয়ে, যে-কোনও মূল্যে একটা আট হাজারের শিখরে উঠতে চাইছে কারণ, সে দেখতে পাচ্ছে এভারেস্ট বা সমতুল্য কিছু পাহাড়ে একবার উঠতে পারলেই টিভি এবং খবরের কাগজের হেডলাইন হওয়া এ পোড়া দেশে নিশ্চিত মিডিওক্রিটি থেকে মুক্তি পাবার এটা একটা নতুন শর্টকাট পর্বতারোহণের বাণিজ্যিক প্যাকেজিং-এর সাফল্য তাই আজ এক ছোঁয়াচে রোগ এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এই সংক্রমণের জীবাণু ছড়াচ্ছে ভয়ঙ্কর দ্রুত হারে। দেখতেই পাচ্ছেন প্যাকেজিং-এর থাবা কে-টুকেও ছাড় দেয়নি।



১৩- সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমবাংলা থেকে আটহাজারি শৃঙ্গ ‘জয়’ করতে যাওয়ার মিছিল তাই কোনও যুগান্তকারী ঘটনা নয়— বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা হয় অযোগ্য, না হয় ট্যুরিস্ট ক্লাইম্বারদের ইগো ট্রিপ। বিগত তিন দশকে বিশ্ব জুড়ে পর্বতারোহণ দর্শনের দৈন্য দেখে ডগ স্কট তো একেবারে রাখঢাক না করেই বলেছেন, “যাদেরই পকেটে টাকা আর মনে ইনস্ট্যান্ট সেলিব্রিটি হবার শখ ছিল তারা তাদের সেই স্বপ্ন কিনতে পেরেছে”



১৪- তবে, বনিংটন-ডগ স্কটরা কী বলছেন এসব বিষয়ে কথা বলা আজ এই দেশ, বিশেষ করে এই রাজ্যে ভস্মে ঘি ঢালার সমতুল্য। মধ্যমেধার নবজাগরণ এবং তার গণ-উদ্‌যাপনের ফলে আজ নাভিশ্বাস উঠেছে পর্বতারোহণের দর্শনেরএদেশে যারা এভারেস্ট, কিংবা সমতুল ঘরানার কোনও পাহাড়ে ওঠেন তাঁরাই রাতারাতি পূজিত হন। সেই পূজা পর্বতারোহণ-মূর্খ কোনও সাংবাদিকের উচ্ছ্বসিত রিপোর্টেই থেমে থাকে না, খোদ সরকার বাহাদুরও এই দিগ্বিজয়ী বীরদের কখনও সম্মানীয় পদ, কখনও গোল্ড মেডেল ইত্যাদিতে ভূষিত করে থাকেন। একবারও ভাবা হয় না যে, এই স্বঘোষিত, দিগ্বিজয়ী অভিযাত্রীরা আসলে শেরপা এবং স্থানীয় ট্রাভেল এজেন্সির অ্যাডভেঞ্চার কেটারিং সার্ভিসের সম্মানীয় ক্রেতা। যুবসমাজকে একবারও ভেবে দেখার সময় দেওয়া হয় না যে, মাউন্টেন ট্যুরিজম এবং মাউন্টেনিয়ারিং— এই দু’টির মধ্যে তফাত আকাশ এবং পাতালের একই চিত্রনাট্য পুনরাবৃত্ত হয় ভারতীয় হিমালয়ে- মাউন্টেনিয়ারিং ক্লাবগুলির বাৎসরিক অভিযানেওশেরপারা রুট ওপেন করেন, রোপ ফিক্স করেন- বাবুরা বলেন করেছি। বলেন, ফিক্সড রোপে জুমার লাগানো দেখতে পাচ্ছেন তো কী হয়েছে, আসলে আমরা নিজেরাই ক্লাইম্ব করেছি; জুমার তো প্রপঞ্চময় মায়াসত্যি, কম ঝক্কি পোয়াতে হয় শেরপা ভাইদের! এক্সপিডিশন থেকে ফেরা বাংলার বনিংটনরা তার পর থেকে দূর্গাপুজার ফিতে ছাড়া আর কিছু কাটেন না এবং দেখা দেন আগামীকালের পর্বতারোহণের উপদেষ্টা, এমনকী, নীতিনির্ধারক রূপে সমস্যাটা এখানেই।



১৫- এদিকে বিশ্বের পর্বতারোহণ ম্যাপে যুক্ত হয়েছে নতুন এক শ্রেণি এঁরা নিজেদের মাউন্টেনিয়ার কিংবা অ্যাল্পিনিস্ট নয়, পরিচয় দিচ্ছেন মাউন্টেন অ্যাথলিটহিসেবে একের পর এক শিখর জুড়ে, তা আল্পসই হোক কিংবা হিমালয়, গত দশ বছরে আমরা স্পিড রেকর্ড ভাঙার প্রতিযোগিতা দেখছি ২০১৩ সালে, লোৎসে ফেসে উয়েলি স্টেক-সিমোনে মোরোদের সঙ্গে শেরপাদের হাতাহাতি-রেষারেষি পৃথিবীর সামনে এক চরম অস্বস্তিকর চিত্র তুলে ধরেছে। ফি বছর আরও বিচিত্র, আরও কঠিন, আরও দ্রুত গতির কিছু চমক জাগানো ক্লাইম্ব করাকে উয়েলি স্টেক বলতেন তাঁর ‘বিজনেস’। এভারেস্টের সেই তিক্ত ঘটনার পর ‘দি নিউ ইয়র্কার’ পত্রিকাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে উয়েলি স্টেক বলেছিলেন, “To make business, you need stories. To create stories, you need to come up with projects—bigger and bigger ones with each passing years—and then you need to succeed at them”



১৬- আমাকে ভুল বুঝবেন না। I respect everything in an athlete- strength, speed etc. আমার সঙ্গে যারা পাহাড়ে গেছেন তাঁরা জানেন ফিটনেসের ব্যাপারে আমি কতটা সিরিয়াস। কিন্তু আজ প্রতিনিয়ত এক-একজন মাউন্টেন অ্যাথলিটেরবিগার অ্যান্ড বিগার-এর পিছনে ছোটা দেখে কখনই ওয়াল্টার বোনাত্তির সেই উক্তি মনে পড়ে না: “What is there, beyond the mountain, if not the man?” ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আট হাজার মিটারের পাহাড় হোক কিংবা আল্পসের কোনও নর্থ ফেস, খবরে থাকার জন্য এই পর্বতারোহীরা যে-কোনও মাদারি-কা-খেল দেখাতে প্রস্তুত। তাই মাউন্টেন আথলিটদের বলছি- আপনাদের দায়িত্ব অনেক। ব্রুস লি- র কথা মনে রাখবেন।  



১৭-চীনের দিক থেকে কে-টু ক্লাইম্ব করা পোলিশ পর্বতারোহী দারিউস জালুস্কি আমাকে বলেছিলেন, “পাহাড় আমার স্টেডিয়াম নয়, পাহাড় আমার থিয়েটার দারিউসের কথায় আমার মনে পড়েছিল, ১৯৮৫ সালে গাশেরব্রুম-৪ শৃঙ্গের পশ্চিম দেওয়ালে আটকে পড়া আর এক পোলিশ পর্বতারোহী ভয়টেক কুর্তিকার কথা কুর্তিকা এবং রবার্ট শাউয়ার সেবার ওয়েস্ট ফেস ক্লাইম্ব করে ফেলেছিলেন, কিন্তু শিখর তখনও দূরে ছিল কুর্তিকা বুঝতে পেরেছিলেন, আর এগোলে মৃত্যু নিশ্চিত তাই দু’জনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নেমে আসার সামিটে না গেলেও বিশ্বের পর্বতারোহী মহল তাঁদের এই ক্লাইম্বকে অসম্পূর্ণ বলেননি সেই প্রসঙ্গে কুর্তিকা বলেছিলেন, “এর থেকে বোঝা যায়, অ্যাল্পিনিজম আসলে স্পোর্টনয়, এটি একটি আর্ট Only in art does a missing link contribute to the meaning of a piece” (অসম্ভবের সীমারেখায় ছবি আঁকা এই ক্লাইম্বিং রুট দেখে কেউ কেউ একে শতাব্দীর সেরা ক্লাইম্বতকমা দিতে চেয়েছিলেন তার জবাবে কুর্তিকা বলেছিলেন, “কোনও একটি বিশেষ কবিতাকে কি কখনও শতাব্দীর সেরা কবিতা বলা যায়?”)  



১৮- তাই, কুর্তিকা এবং দারিউসের দেখানো দর্শনের ওপর ভরসা রেখে, আজ মনে হয় আবার নতুন করে এক সরল এবং নান্দনিক স্বপ্ন দেখা শুরু করা যায়। ভেবে নেওয়াই যায়, জয়পতাকা ওড়ানোর অভিপ্রায়ে নয়, আবার একদিন বাংলায় সেদিন আসবে যেদিন অভিযান হবে নির্ভেজাল আনন্দের খোঁজে, শেখার আগ্রহে, নিজেকে একজন ক্লাইম্বার হিসেবে গড়ে তোলার হনেস্ট এফর্টে। শর্ট কার্ট দিয়ে নয় 



১৯- মনে রাখবেন আর্টের আগে প্রয়োজন ‘ক্রাফট’। তাই শরীরকে ট্রেন করবেন, নতুন টেকনিক শিখবেন। তারপর, নিজেদের ক্ষমতা, শৈলী এবং অভিজ্ঞতার ওপর ভর করে প্রথমে ছোট ছোট শৃঙ্গ দিয়ে হাত পাকাবেন তাঁরা। তারপর একদিন কেবল গুটিকয় বন্ধু মিলে, পেল্লায় স্যাক কাঁধে তুলে নিয়ে, অপেক্ষাকৃত উঁচু পাহাড়ে, কঠিনতর ক্লাইম্বিং চ্যালেঞ্জের সন্ধানে পাড়ি দেবেন ঠিক যেমন ভাবে একদিন ফিনিক্সের মতো, পোলিশ অভিযাত্রীরা তাঁদের যাত্রা শুরু করেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের বুক থেকে। পর্বতারোহণ সেদিন হবে আত্মিক উত্তরণের সোপান — আ সেলিব্রেশন অফ লাইফ ইটসেলফ।

সমাপ্ত

Tuesday, August 9, 2022

The old man and the bridge

I met an old man by the hanging wire bridge in the vale. 

We were traveling in the same direction, I could tell. 

As I slowed down with a smile, it was just a moment, but there we lived for a while. 

Only the hanging wire bridge knows our tale.

Saturday, August 6, 2022

ইচ্ছে হলে লিখব, না হলে লিখব না! 😆

'পাবলিশ অর পেরিশ-  Publish or Perish' 


ইন্টারনেট বলছে এই কথাটা নাকি ড্যানিয়েল জে বার্নস্টাইন নামের  সাম্প্রতিক সময়ের এক গণিতজ্ঞ বলেছেন। 


তবে আমার ধারণা ছিল কথাটা যথেষ্ট প্রাচীন এবং আমি মনে করি, কেবল তথাকথিত অ্যাকাডেমিয়া নয়, অভিযান সাধনাতেও এই কথা প্রযোজ্য। কারণ অভিযানের যাথার্থ শিক্ষায়, ট্রফি শিকারে নয়। 

(এক্ষেত্রে 'ট্রফি হান্টিং' কথাটা আমি আক্ষরিক কম এবং রূপকার্থে বেশী ব্যবহার করতে চেয়েছি। কারণ, আফ্রিকার কোন এক বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী শিকার এবং মাউন্ট এভারেস্ট আরোহণ- এই দুটিই আজ একই গোত্রে পড়ে গেছে। ) 



আপনি ঠিকই পড়েছেন, লেখার শুরুতেই  আমি 'অভিযান' শব্দটির পর 'সাধনা' শব্দটি ব্যবহার করেছি। কারণ আমি মনে করি, প্রকৃত অভিযাত্রীরা এক একজন সাধক।  গায়ক, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানীদের মতই অভিযাত্রীরাও  কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছেন।  ফ্রাঁসোয়া আরাগো বলেছিলেন- " To get to know, to discover, to publish- this is the destiny of a scientist."  এবং বিশ্বকবির ভাষায় এই খোঁজ-  " আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না", কারণ- "এই জানারই সঙ্গে সঙ্গে তোমায় চেনা।।

হ্যাঁ, অভিযাত্রীরাও কিছু সত্য, কিছু প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে আনেন এবং বিশ্বকে তা জানানোর চেষ্টা করেন।  সেই অনুসন্ধিৎসু 'পথ চলাতেই' তাঁরা 'আনন্দ' খুঁজে পান।  

রিচার্ড ফ্রান্সিস বার্টন, পরবর্তী কালে এরিক শিপটন, ফ্র্যাংক স্মাইথ এবং বিল টিলম্যানদের লেখা কেবল ' চাঁদ উঠেছে-ফুল ফুটেছে' কিংবা ' দুর্গম গিরি- চল জয় করি' নয়; বরং মানুষের সমাজ, বিজ্ঞান, দর্শন এবং আত্ম-জিজ্ঞাসার এক একটি দলিল। 

আমার এও মনে হয়, রিচার্ড বার্টনের (অভিনেতার কথা বলছি না) অভিযাত্রী স্পিরিট এবং কাজ নিয়ে বাংলা ভাষায় একটা কোন কম্প্রিহেন্সিভ কাজ হওয়া উচিৎ।  ওনাদের সময়ে ঔপনিবেশিক 'অ্যাডভান্টেজ এবং প্রিভিলেজ ছিল এবং তাহা অন্যায়'- এই বিচারধারাকে একটু সাইডে সরিয়ে রেখে করলে হয়ত এখনও অনেক কিছু শেখা সম্ভব। তবে অভিযাত্রীদের বিজ্ঞান সাধনা এবং অবদানের নিরিখে আমি ফ্রিৎসফ ন্যানসেন কিংবা  অ্যালেক্সান্ডার ফন হামবোল্টকে অনেক উচ্চ স্থানে রাখি।  এ প্রসঙ্গে একটি অসাধারন বইয়ের কথা উল্লেখ না করে পারা গেল না। বইটির নাম-  Measuring The World, লেখক ড্যানিয়েল কেলমান। পড়ে দেখতে পারেন। অনলাইনে পাওয়া যায়।  আর একটা অসাধারণ ওয়েবসাইটের খবরও আপনাদের দিয়ে রাখি- Explorers Podcast. বিশ্বের সর্বকালের সেরা অভিযাত্রীদের জীবন এবং তাঁদের কাজ এখানে পডকাস্টের আকারে রাখা আছে। বই পড়তে যখন ভাল লাগবে না, তখন চোখ বুজে শুনতে পারেন। ভাল লাগবে।

এই পডকাস্ট গুলো এক একটা ভ্যাক্সিনের মত। কূপমণ্ডূকতার অসুখ ধরবে না।   

( এজেন্সির প্যাকেজে অ্যাডভেঞ্চার কেনা লোকজন এবং তাঁদের পৃষ্ঠপোষকেরা এই কথার অর্থ বুঝবেন না।  তবে, ভবিষ্যতে তাঁদের জন্য কোনও আশাও নেই, ভালবাসাও নেই। কারণ আমি বিশ্বাস করি  আমাদের পরের প্রজন্ম প্রকৃত অ্যাডভেঞ্চারকে চিনে  নেবে এবং  তার সঠিক মুল্যায়ন করবে।) 
 
যাইহোক, এবার নিজের ঢাক নিজেই পেটানোতে আসি। 

যে কথা বলতে গিয়ে এতটা ভূমিকা করে ফেললাম তা হল- আমার নিজেরও একটি অভিযান ধারণা এবং সাধনা রয়েছে। তার বেশীর ভাগটাই এখনও লেখা হয়নি। হিমালয়ে আমার অভিযান এবং নতুন পথের অনুসন্ধান ইত্যাদি বিষয়ে 'দি হিমালয়ান জার্নাল' এবং 'দি আল্পাইন জার্নালে' আমার কয়েকটা রিপোর্ট ছাপা হয়েছে ঠিকই কিন্তু  বিস্তারিত এবং সর্বাঙ্গীণ ভাবে এখনও লেখা হয়নি। 

আমার আফ্রিকার কাজ এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের পথে চলার কাজ- এই গুলোই আপাতত ছাপা বই হিসেবে প্রকাশিত। 'কাজ'-ই বললাম, কারণ দুবার সাইকেল নিয়ে আফ্রিকার দুপ্রান্তে পাড়ি দেওয়া এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের যাত্রাপথ অনুসরণ করা - এগুলোর কোনটাই কোনও ট্রাভেল এজেন্সির প্যাকেজ ট্যুর ছিলনা। এই প্রত্যেকটা বেরিয়ে পড়াই জন্ম নিয়েছিল ভবঘুরের চরম কৌতূহল থেকে, কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার তাগিদ থেকে। 

'অতএব আফ্রিকা', 'আবার চাঁদের পাহাড়', 'গঙ্গা থেকে চিনশা', 'Sahara Soliloquies'  এবং 'দেশনায়কের পথে'-  আমার যেকোনো একটা বই পড়লেই দেখতে পাবেন এগুলো নিছক ভ্রমণ কাহিনী কম, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ অনেক বেশী।  

কোনোদিনই সংবাদ মাধ্যমে প্রচার কিংবা বিশেষ বই প্রকাশ অনুষ্ঠান- এই ধরণের কিছু আমার পক্ষে করা সম্ভব হয়নি। তাই নিজের ব্লগ এবং সোশ্যাল মিডিয়াই আমার সম্বল।  এই মুহুর্তে যেসব বইগুলি অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর ছবি নীচে দিলাম।  বাংলা বইগুলি 'ছাপা বই'।  'Sahara Soliloquies'- Kindle eBook. বইয়ের ছবিগুলিতে ক্লিক করলে কেনার অনলাইন লিংক খোলা উচিৎ। 






পুনশ্চঃ 'সাহারা সলিলোকিস' এবং 'গঙ্গা থেকে চিনশা'-  এই দুটো বইকেই ছাপার ইচ্ছা রয়েছে। সময়, সুযোগ পেলেই হয়ে যাবে। এদিকে পেরুতে আমার অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে 'পেরুস্কোপ' লেখার কাজ শেষ। দেখা যাক কবে প্রকাশ পায় বই হিসেবে। আফটার অল- পাবলিশ, অর পেরিশ বলে কথা। তবে কোন 'প্রেসার' আমার ওপর নেই। 

ইচ্ছে হলে লিখব, না হলে লিখব না! 😆 
আর আপনারাও ইচ্ছে হলে পড়বেন, না হলে পড়বেন না। 

Thursday, July 28, 2022

হুইস্কি নিয়ে 'পিট'-পিটানি

পিট (Peat) ব্রিকস বানানোর কাজ চলছে। ছবিঃ findrarewhisky.com

এই লেখার নায়ক 'পিট' এবং গল্পের পটভূমিকা 'হুইস্কি'।  যদি 'পিট' সম্পর্কে আগ্রহী থাকেন তাহলে এই লেখার শেষে কয়েকটা লিংক দেওয়া আছে- সেগুলো পড়ে জানা আরম্ভ করতে পারেন। হুইস্কি না হয় নাই খেলেন- জানতে তো আর বাধা নেই। স্বয়ং মার্ক টোয়েন কী বলেছিলেন মনে আছে তো? সেই যে- “Too much of anything is bad, but too much good whiskey is barely enough.”

Wednesday, July 27, 2022

কে-টুতে কাতুকুতু

কে-টুরও কী শেষে এভারেস্টত্ব প্রাপ্তি হল?  কে-টুও মি টু বলল? k2 says 'me too'*? Blimey! 

কে-টু ও বলছে মি টু , ছবি সুত্রঃ ইন্টারনেট 

এভারেস্টে ফি-বছর ট্রাফিক জ্যাম দেখে এখন জনগণ অভ্যস্ত, তাই গত কয়েক বছর কেউ সেরকম 'গেল গেল' রব তোলেন নি। সয়ে গেছে। তাই বলে কে-টুতেও কাতুকুতু? এও দেখতে হল? 

'Savage Mountain'-এও সেই তারকেশ্বরে বাবার মাথায় জল ঢালার মত লাইন দেখে বিদগ্ধজনেরা সেরকমই বলছেন। 

ব্রায়ান হলের পোস্ট সুত্রঃ ফেসবুক 

নিমস দাইয়ের একটি পোস্ট শেয়ার করে ব্রায়ান হল ফেসবুকে লিখেছেন, "I am perplexed, and I am unable to process the importance of this ascent. Only time will put it in historical context. From when I was on K2 in 1986 and again in 2000 I can only see it as a different game to what I took part in. Mountaineering has become a goal orientated pursuit where style and ethics have been discarded by using the maximum resources available particularly for the clients, who totally rely on fixed ropes, oxygen and everything prepared and carried by a team of highly organised guides. Modern weather forecasts are also a game changer. I view it as (perhaps through outdated eyes), like competing in the Tour de France with an electric bike." 


সেলিব্রিটি ক্লাইম্বার নিমস দাজুর সেই ছবি, সুত্রঃ ইন্টারনেট 



লক্ষ লক্ষ ডলারের খেলা ব্রায়ান কাকা। অবাক হবার কী আছে? এমনটা তো হবারই ছিল। ভবিতব্য লেখা হয়েই গিয়েছিল যখন থেকে অ্যাডভেঞ্চার আর পাহাড় চড়াকে পণ্যে পরিণত করা শুরু হয়েছিল। এখন তো কোন এজেন্ট কত পারসেন্ট সামিট সাকসেস দিতে পারল তারই প্রতিযোগিতা চলবে, কে-টুতেও চলবে, পিওরিস্ট পাহাড়িয়াদের ভাল না লাগলেও চলবে- যেমন এতদিন চলছিল নেপাল এবং চীনের অন্যান্য ৮০০০ মিটারের পাহাড়গুলোতে।  

এই প্রসঙ্গে মনে পড়ল কয়েক বছর আগে ইন্টারনেটে একটা বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম। সেই বিজ্ঞাপনের ছবি এবং ক্যাপশন এখানে দিলাম- দেখুন, বিজ্ঞাপনের লাইন পড়ুন এবং বুঝুন- 

ওপরে বিজ্ঞাপনের ছবি এবং নীচে সেই সেলস পিচ- 

“What's an intrepid adventure traveler to do when they've already visited all seven continents, climbed Kilimanjaro, hiked the Inca Trail, and sailed the Galapagos Islands? Why, visit the North Pole of course!  Not many people realize that it is actually possible to make the journey to the very top of the world, but for those who are adventurous enough – and have plenty of cash..."

কী বুঝলেন কাকা? সব অ্যাডভেঞ্চার করে ফেলেছেন? কিলিমাঞ্জারো, ইনকা ট্রেল, গালাপাগোস দ্বীপ- সব 'করা' হয়ে গেছে? এবার কী করবেন ভাবছেন? কেন? এতে ভাবার কী আছে? চলুন এবার উত্তর মেরুটা মেরে দিয়ে আসি, কেমন? আরে উত্তর মেরু যাওয়া আর এমন কী ব্যাপার? আপনাকে একটু দুঃসাহসী হতে হবে, আর বেশ মোটা ম্যাপের ক্যাশ থাকতে হবে...ব্যস কেল্লা ফতে! 

যাই হোক, ব্রায়ান হলের পোস্টের থ্রেডে অনেকেই মন্তব্য রাখছেন। তবে তার মধ্যে আমার এক পরিচিত জন ইয়ান ওয়ালের কমেন্ট এখানে তুলে দিলাম- 



 

এদিকে আমার প্রিয় আর একজন দুর্ধর্ষ ক্লাইম্বার টিম ম্যাকার্টনি স্নেপ লিখেছেন-



ইস, এমন সত্যি কথা লিখে দিলেন ইয়ান এবং টিম? এখানে এসব লোকে সহ্য করবে না বলে দিলাম! 

যাইহোক, যাঁরা বাপের ভিটে এবং মায়ের গয়না বিক্রি কিংবা জনগণের কাছে ধার করে এজেন্সির প্যাকেজ না কিনলেও অ্যাডভেঞ্চার খুঁজে পান- তাঁদের জন্য স্বয়ং রেইনহোল্ড মেসনারের পরের কয়েকটা লাইন দেওয়া রইল- 

"Put on your boots and get going. If you've got a companion, take a rope with you and a couple of pitons for your belays, but nothing else. I'm already on my way, ready for anything - even for retreat, if I meet the impossible. I'm not going to be killing any dragons, but if anyone wants to come with me, we'll go to the top together on the routes we can do without branding ourselves murderers." ( Reinhold Messner, Murder of the Impossible) 


আর এই বিষয়ে এই অধমও কয়েক বছর আগে একটা পুরদস্তুর টেড-এক্স টক দিয়ে ফেলেছিল। সেটার লিংকটাও এখানে দিয়ে দিলামঃ 




তাহলে ভেবে দেখুন, আপনার অ্যাডভেঞ্চার কেমন হওয়া উচিৎ? আপনি ঠিক কী চান? মেকি গৌরবের দাম্ভিক হুংকার ? নাকি একটা সহজ, সরল, ওরিজিনাল, অর্থপূর্ণ অ্যাডভেঞ্চার? 


(* I have no intention to trivialise the original connotation of the Me Too movement)

Saturday, July 23, 2022

অনেক কিছুর জন্যই কৃতজ্ঞ, তবে কফির জন্য বিশেষ করে

মাঝেমাঝে রাতে-র ঘুম ভাঙার আগেই আমি জানলার পাশে এসে দাঁড়াই। মনে হয় একটানা অনেকক্ষণ গভীর হবার পর একসময় ফিকে হতে হয় রাতকেও। তখন তার মধ্যে এক প্রশান্ত নীরবতা কাজ করে। কখনোসখনো, সেই নীরবতার মধ্যে এক অদ্ভুত উচ্চতা খুঁজে পাই আমি। তখন তাকে খুব পরিচিত মনে হয়।  মনে হয়, কেবল পাহাড়ের চুড়াতেই, এই উচ্চতাকে অনুভব করেছি আমি। কিন্তু বেলুড়ের গঙ্গার ধারের এই ভাঙা জানলায়, মাঝেমাঝে সেই উচ্চতা নেমে আসে কী করে? মুগ্ধ বিস্ময়ে আমি হতবাক হয়ে যাই। 

আসলে জীবনের প্রতি মুহূর্তে একটা উচ্চতা খুঁজে চলি আমি। একেবারে নাছোড়বান্দার মত। তাই হয়ত একটু বিরক্ত হলেও, সে আমার জানলায় দেখা দিয়ে আবার কোথায় যেন চলে যায় এক অন্যমনস্ক ব্যস্ততায়। এদিকে একটানা কিছুদিন একজায়গায় থাকলেই আমার মন অসম্ভব চঞ্চল হয়ে পড়ে। কারণ আমি জানি এই জীবন আর বেশী দিন নেই। সময় সীমিত, তাই দুচোখ ভরে দেখে নিতে চাই এই পৃথিবী, অজানা পাহাড়-নদী এবং আরও অচেনা তার মানুষকে। বিচক্ষণেরা জানিয়েছেন  এ আমার এক রোগ। সেই বিচক্ষণদের জানাই, কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী  তো সেই কবেই এই ব্যাধির কথা বিস্তারে লিখে গেছেন।  (কবির ডায়াগনোসিসের লিংক এখানে দিয়ে রাখলাম- 'এরিক শিপটনের ব্যাধি'। )

তাই স্বীকার করতে দ্বিধা নেই- আমি অ্যাডভেঞ্চারেই বাঁচি। তাই, এরিক শিপটনের ব্যাধিতেই আমার মুক্তি। 

তবে সব সকালে আমার জানলায় সেই উচ্চতা খুঁজে পাইনা। তখন মগজের রিসেপটর কোষগুলোতে লেপটে শুয়ে থাকা অ্যাডিনোসিনের দলকে একটা ধাক্কা দিয়ে সরানোর প্রয়োজন হয়। তখন আমি খোঁজ করি এমন একটা অ্যালকালয়েডের, যে আমার রক্তে মিশে যাবে। একই রকম দেখতে বলে, মস্তিষ্কের রিসেপটর কোষগুলো অ্যাডিনোসিন ভেবে হাত মেলাবে তাদের সঙ্গে। ব্যস, ঘুম পাড়ানি অ্যাডিনোসিন গুলোকে সরিয়ে তাদের জায়গা নেবে ক্যাফিন। আমার সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম এবার সজাগ হয়ে উঠবে। নিজের শরীরের সঙ্গে এ এক প্রাত্যহিক প্রবঞ্চনা। অ্যাড্রেনালিন অবশ্য বলবে, যাক বাবা, বাঁচালে! ভাগ্যিস ক্যাফিন ছিল। একা আর কতদিক সামলাব?

থ্যাংক ইউ গড ফর কফি!  



Thursday, July 21, 2022

অরণ্যে রোদন


সবসময় নয়, তবে মাঝেমধ্যে কিছু লেখার একটা তাগিদ আমার মধ্যে কাজ করে বলেই একসময় https://himalaya-raja.blogspot.com/  এই ব্লগ পেজটা খুলেছিলাম। নাম দিয়েছিলাম- 'Soliloquy of a Wandering Pilgrim or In Dialogue with Destiny' । 

স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে এটি একটি বিচিত্র নাম। এই বলছি 'সলিলোকি', আবার পরমুহুর্তে বলছি 'ডায়ালগ'। আসলে আমার মনে হয়েছিল স্বগতোক্তিও একধরণের আলাপচারিতা হতে পারে- হোক না তা নিজের সঙ্গেই। নিজের ব্লগে লিখতে পয়সা লাগে না এবং কাউকে জবাবদিহিও করতে হয় না! তাই জন্যই আমার এই ব্লগ পেজ।  নিজের যা খুশী, যখন খুশী লিখব- এই ভেবেই খুলেছিলাম। আবার যদি কোনদিন ইচ্ছে হয় তখন বন্ধ করে দেব লেখা। কেউ তো মাথার দিব্যি দেয়নি যে লিখতেই হবে।   

সেইরকমই একটা ছোট লেখা কয়েকদিন আগে লিখেছিলাম এখানে। নাম দিয়েছিলাম-'ইন্দ্রবর্মার হাতি'। বাংলার পর্বতারোহণের ভাগ্যাকাশে ঘটে যাওয়া ইদানীংকালের একটা ভেল্কিবাজি ছিল সেই লেখার বিষয়। (প্রসঙ্গান্তরে বলে রাখি বাংলার আট হাজার মিটারি পর্বতারোহণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে এরকম আরও বেশ কিছু ভেল্কিবাজির ঘটনা রয়েছে) 

যাইহোক, ইন্দ্রবর্মার সেই হাতি নাকি পর্বতারোহীঠাসা দুয়েকটা সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপেও পৌঁছেছিল।  কিন্তু সেই লেখা পড়ে কারও কিছু আসে যায়নি। কেউ কোন মন্তব্যও করেননি- স্রেফ অগ্রাহ্য কিংবা উপেক্ষা করে গেছেন। পাহাড়িয়া লোকজনের এইরকম নির্বিকল্প সমাধী দেখে আমার কয়েকজন হিমালয়প্রেমী বন্ধু অবাক হলেও, আমি হইনি। বরং ভারী আমোদ হয়েছিল এই ভেবে যে- বাংলার পর্বতারোহণ জগতে আমার 'ইন্দ্রবর্মার হাতি' ইংরাজি  বাগ্ধারা '(The) Elephant in the room'- এর সত্যতা প্রায় আক্ষরিক অর্থেই প্রমাণ করতে সফল হয়েছে। 

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ 

আসলে গোড়ায় গলদ হয়েছে 'মাউন্টেনিয়ারিং ট্যুরিজম' এবং 'মাউন্টেনিয়ারিং'- এই দুটো ব্যাপারকে জনমানসে সমার্থক হয়ে যেতে দেওয়ায়।  সোনা এবং সোনার পাথর বাটিকে তো একই গোত্রে ফেলে দিয়েইছো- এবার বোঝো ঠ্যালা!  কী ভাবে এই ভাবের ঘরে চুরি হল সেই নিয়ে একটা বিস্তারিত আলোচনা অন্যত্র করা যেতে পারে এবং পাঠকদের মধ্যে কেউ এই নিয়ে সত্যিই পড়াশুনো করতে চাইলে অনেক উপাদান তাঁদের নাগালের মধ্যেই পেয়ে যাবেন। 

তাই আর বিশদে না গিয়ে বলতে চাইছি, মধ্যমেধার নবজাগরণ, সোশ্যাল মিডিয়ায় তার অসীম ক্ষমতায়ন এবং তার গণ-উদ্‌যাপনের ফলে আর পাঁচটা বিষয়ের মতই নাভিশ্বাস উঠেছে পর্বতারোহণের দর্শনেরও। ম্যালোরির ‘বিকজ় ইট ইস দেয়ার’ কিংবা চেস্টারটনের ‘থিং’ — সবকিছুরই প্রকৃত অর্থ হারিয়ে গেছে। একটা অস্পষ্ট দর্শনের ( Philosophy of fuzziness) পতাকা পতপত করে উড়ছে সর্বত্র। তাই 'almost done' টাও 'done' হয়ে যাচ্ছে নির্বিরোধে এবং নির্বিচারে চলে আসছে সংবাদ শিরোনামে। একটা মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে সত্যে। 

হাই- অলটিচিউড মাউন্টেন ট্যুরিজম ভালো, পর্যটন শিল্পের জন্য ভালো, পর্যটন কর্মীদের জন্য ভালো, পাড়ায় ফিরে কলার তুলে হাতির পিঠে চেপে সম্বর্ধনা নেবার জন্য ভালো- কিন্তু তাই বলে টুরিস্ট মাউন্টেনিয়ার কখনই প্রকৃত মাউন্টেনিয়ার হয়ে যায় না। জেফ বেজোস কিংবা ইলন মাস্কের রকেট চেপে মহাকাশ সফর সেরে এলেই যেমন কেউ নভশ্চর হয়ে যান না, ঠিক সেরকম কোন ট্র্যাভেল এজেন্সির প্যাকেজ ট্যুরে এভারেস্ট ( এবং তারপর ফি-বছর আরও ৮০০০ মিটারি) চড়েও কেউ মাউন্টেনিয়ার হয়ে যান না। 

তবে কিছুটা দুঃখজনক  স্বান্তনার কথা হল যে, এই টুরিস্ট ক্লাইম্বিং-এর উপদ্রব কেবল বাংলায় নয়, সারা বিশ্বেই বেড়েছে কমবেশি।  এই সামুহিক অবক্ষয়ের অভিমুখ দেখেই ২০০২ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইম্বিং অ্যান্ড মাউন্টেনিয়ারিং ফেডারেশন (Union Internationale des Associations d'Alpinisme- UIAA) এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন যা আজ ‘দি টিরল ডিক্লেয়ারেশন’ নামে পরিচিত টিরল ঘোষণায় একটা কথা পরিষ্কার ভাবেই বলা হয়েছেবিপদ এবং অনিশ্চয়তা ব্যতীত ক্লাইম্বিং তার প্রকৃত পরিচয়তার সংজ্ঞায়িত উপাদান হারায়— এবং তা হল অ্যাডভেঞ্চার Without danger and uncertainty climbing loses its defining element-adventure”। 

এজেন্সিরা যে প্যাকেজগুলি বিক্রি করেন তার নাম 'অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম', 'অ্যাডভেঞ্চার' নয়- তা সে মাউন্ট এভারেস্টও হতে পারে, সেভেন সামিটস হতে পারে, আবার এক্সপ্লোরার্স গ্র্যান্ড স্ল্যাম-ও হতে পারে।  যেমন গালভরা প্যাকেজের নাম, তেমনই যুতসই তার দাম।  এই পদ্ধতিতে পাহাড় চড়ে (কিংবা মেরু বিজয় করে) কারও ব্যক্তিগত শখ মেটে বটে, তবে তা সমাজকে কিছু দেয়না। তাই কেউ নিজের কিডনি বেচে, কিংবা বাপের জমি বন্ধক রেখে  এজেন্সিকে পয়সা দিতে পারছে, কি পারছে না, তা কখনই একটা সামুহিক বিবেচ্য বিষয় কিংবা সামাজিক দায়বদ্ধতার পরিচায়ক হওয়া উচিৎ নয়।  

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

কিন্তু এতসব কিছু জানা সত্ত্বেও যখন সেই টুরিস্ট ক্লাইম্বিং-কেই একটা সমাজ ফুলমালা দিয়ে, রেকারিং ডেসিম্যালের মত  বরণ করে নিতেই থাকেন, তখন প্রশ্ন জাগে আমরা কি সত্যিই খাঁটি জিনিষ পেতে আগ্রহী? 

নাকি, আমাদের সামুহিক হতাশা এবং দূর্দশা আজ এতটাই যে 'নাকের বদলে নরুন' পেয়েই আমাদের এই গণ টাক-ডুমা-ডুম  উৎসব সমানে চলিতেছে? 

আবার কখনও এও মনে হয়, আজ আমাদের পাহাড়িয়া সমাজ সেই  'ম্যাড কাও' রোগে আক্রান্ত গরুটি যে নিজের স্বরূপ ভুলেই গেছে এবং তাই তার আর কোন দুশ্চিন্তাও নেই এবং স্বাভাবিকভাবেই সে সব কিছুর উর্দ্ধে এক তুরীয় অবস্থায় পৌঁছে গেছে।

"সুখী, সবাই সুখী, জয় তারা!"  

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~




Monday, July 18, 2022

ইন্দ্রবর্মার হাতি


আমরা জানি, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অশ্বত্থামা ছিলেন কৌরবদের পক্ষে। এদিকে ছেলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন না বলেই গুরু দ্রোণও কৌরবদের পক্ষেই দাঁড়ান।  যথারীতি, যুদ্ধে দ্রোণাচার্য অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। পাণ্ডবদের মধ্যে ওঠে ত্রাহি ত্রাহি রব। তখন শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডবদের বলেন কোনও ভাবে যদি গুরু দ্রোণের কানে অশ্বত্থামার মৃত্যুর 'ভুল' খবর পোঁছানো যায় তাহলে দ্রোণ আর মারদাঙ্গা করবেন না। আর সেই সুযোগে, ধৃষ্টদ্যুম্ন তাঁকে হত্যা করবে। 

প্ল্যানমাফিক, ভীম মালবরাজ ইন্দ্রবর্মার অশ্বত্থামা নামক একটি নিরীহ হাতিকে হত্যা করেন এবং সেই হত্যার সাক্ষী রাখা হয় যুধিষ্ঠিরকে। সবাই জানত, আচার্য্য দ্রোণ, আর যাই হোক যুধিষ্ঠিরের কথাকে অবিশ্বাস করবেন না, কারণ তিনি একজন বেঞ্চমার্ক সত্যবাদী ছিলেন কিনা। ব্যস, এরপর একজন নিষ্ঠাবান সাংবাদিকের মত যুধিষ্ঠির দ্রোণকে জানান যে, 'অশ্বত্থামা হতঃ- ইতি গজ'। 

কিন্তু সেই সংবাদ পরিবেশনে একটা মোক্ষম চাল ছিল। যুধিষ্ঠির, 'অশ্বত্থামা  হত'- এইটুকু চেঁচিয়ে বলেন এবং 'ইতি গজ' - টুকু বলেন স্বর নামিয়ে, মিনমিন করে। একে বয়স হয়েছে, তার ওপর ধুন্ধুমার ধর্মযুদ্ধ চলছে, তার মধ্যে খোলা মাঠে একটু দূর থেকে যুধিষ্ঠির চেঁচিয়ে কীসব বলছে। স্বাভাবিক ভাবেই ঐ 'ইতি গজ'  অংশটুকু  দ্রোণাচার্য্য আর শুনতে পাননি।  

এর ফল কী হয়েছিল আমরা আজ তা সকলেই জানি। 

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ 

সম্প্রতি কাগজের হেডলাইন জানিয়েছে বোতলের অক্সিজেন ব্যবহার না করেই নাকি একজন বাঙালি মাউন্ট এভারেস্টে উঠে পড়েছেন। খুবই আনন্দের কথা। কিন্তু, হেডলাইন টপকে মূল খবরের মধ্যে ঢুকে দেখি লেখা আছে ব্যাপারটা নাকি ঘটেছে  - 'almost'- 'প্রায়'। অর্থাৎ, উনি পুরো রাস্তাটা বোতলের অক্সিজেন ছাড়া  মোটেই ওঠেননি- বরং আরোহণের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেনের সাহায্য নিয়েই উঠেছেন। 

এদিকে আমাদের সাংবাদিকেরা তাঁকে গ্রেস মার্ক দিয়ে পাস করিয়ে দিয়েছেন। ভাবখানা এরকম যে, "আহা, আর একটু হলে তো উঠেই পড়ত! যেটুকু করেনি সেটা আব্বুলিশ!"  অনেকটা সেই 'ইতি গজ' টাইপের ব্যাপার আর কী! 

অবশ্য, সেযুগের যুধিষ্ঠিরের তুলনা এখনকার সাংবাদিকদের সঙ্গেই একমাত্র চলে। বর্তমান যুগের সত্যনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার কথা তো সকলেরই জানা। এই সাংবাদিকেরা তাই সময় সুযোগ পেলেই সেই সুপ্রাচীন 'ইতি গজ' পদ্ধতি তাঁদের 'নিজেদের ধর্মযুদ্ধের' খাতিরে প্রয়োগ করে থাকেন। তাঁদের লেখা হেডলাইনের বিজয় ঘোষণায় হৈহৈ পড়ে যায়। সেই হুল্লোড়ে 'প্রায়' ব্যাপারটা কোথায় যেন ভেসে যায়। 

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ 

এখন প্রশ্ন হল, ভবিষ্যতে এই বাংলারই কেউ যদি  এভারেস্টের সামিট পর্যন্ত বিনা- সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেনে  সত্যি সত্যিই যান ( আশা করি যাবেন), তাহলে তখন এই 'ইতি গজ' হেডলাইন গুলোর কী গতি হবে? 

এবং তার থেকেও বড় প্রশ্ন, ইন্দ্রবর্মার হাতির মত আরও কত সত্যিকার সম্ভাবনা আজকের যুধিষ্ঠিররা  হত্যা করবেন?  

Discovering Ladakh’s Uncharted Petroglyphs : A Short Note

  Whispers on Stone: Discovering Ladakh’s Uncharted Petroglyphs We were trudging down a dusty trail by the frozen stream near the little v...