Monday, July 18, 2022

ইন্দ্রবর্মার হাতি


আমরা জানি, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অশ্বত্থামা ছিলেন কৌরবদের পক্ষে। এদিকে ছেলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন না বলেই গুরু দ্রোণও কৌরবদের পক্ষেই দাঁড়ান।  যথারীতি, যুদ্ধে দ্রোণাচার্য অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। পাণ্ডবদের মধ্যে ওঠে ত্রাহি ত্রাহি রব। তখন শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডবদের বলেন কোনও ভাবে যদি গুরু দ্রোণের কানে অশ্বত্থামার মৃত্যুর 'ভুল' খবর পোঁছানো যায় তাহলে দ্রোণ আর মারদাঙ্গা করবেন না। আর সেই সুযোগে, ধৃষ্টদ্যুম্ন তাঁকে হত্যা করবে। 

প্ল্যানমাফিক, ভীম মালবরাজ ইন্দ্রবর্মার অশ্বত্থামা নামক একটি নিরীহ হাতিকে হত্যা করেন এবং সেই হত্যার সাক্ষী রাখা হয় যুধিষ্ঠিরকে। সবাই জানত, আচার্য্য দ্রোণ, আর যাই হোক যুধিষ্ঠিরের কথাকে অবিশ্বাস করবেন না, কারণ তিনি একজন বেঞ্চমার্ক সত্যবাদী ছিলেন কিনা। ব্যস, এরপর একজন নিষ্ঠাবান সাংবাদিকের মত যুধিষ্ঠির দ্রোণকে জানান যে, 'অশ্বত্থামা হতঃ- ইতি গজ'। 

কিন্তু সেই সংবাদ পরিবেশনে একটা মোক্ষম চাল ছিল। যুধিষ্ঠির, 'অশ্বত্থামা  হত'- এইটুকু চেঁচিয়ে বলেন এবং 'ইতি গজ' - টুকু বলেন স্বর নামিয়ে, মিনমিন করে। একে বয়স হয়েছে, তার ওপর ধুন্ধুমার ধর্মযুদ্ধ চলছে, তার মধ্যে খোলা মাঠে একটু দূর থেকে যুধিষ্ঠির চেঁচিয়ে কীসব বলছে। স্বাভাবিক ভাবেই ঐ 'ইতি গজ'  অংশটুকু  দ্রোণাচার্য্য আর শুনতে পাননি।  

এর ফল কী হয়েছিল আমরা আজ তা সকলেই জানি। 

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ 

সম্প্রতি কাগজের হেডলাইন জানিয়েছে বোতলের অক্সিজেন ব্যবহার না করেই নাকি একজন বাঙালি মাউন্ট এভারেস্টে উঠে পড়েছেন। খুবই আনন্দের কথা। কিন্তু, হেডলাইন টপকে মূল খবরের মধ্যে ঢুকে দেখি লেখা আছে ব্যাপারটা নাকি ঘটেছে  - 'almost'- 'প্রায়'। অর্থাৎ, উনি পুরো রাস্তাটা বোতলের অক্সিজেন ছাড়া  মোটেই ওঠেননি- বরং আরোহণের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেনের সাহায্য নিয়েই উঠেছেন। 

এদিকে আমাদের সাংবাদিকেরা তাঁকে গ্রেস মার্ক দিয়ে পাস করিয়ে দিয়েছেন। ভাবখানা এরকম যে, "আহা, আর একটু হলে তো উঠেই পড়ত! যেটুকু করেনি সেটা আব্বুলিশ!"  অনেকটা সেই 'ইতি গজ' টাইপের ব্যাপার আর কী! 

অবশ্য, সেযুগের যুধিষ্ঠিরের তুলনা এখনকার সাংবাদিকদের সঙ্গেই একমাত্র চলে। বর্তমান যুগের সত্যনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার কথা তো সকলেরই জানা। এই সাংবাদিকেরা তাই সময় সুযোগ পেলেই সেই সুপ্রাচীন 'ইতি গজ' পদ্ধতি তাঁদের 'নিজেদের ধর্মযুদ্ধের' খাতিরে প্রয়োগ করে থাকেন। তাঁদের লেখা হেডলাইনের বিজয় ঘোষণায় হৈহৈ পড়ে যায়। সেই হুল্লোড়ে 'প্রায়' ব্যাপারটা কোথায় যেন ভেসে যায়। 

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ 

এখন প্রশ্ন হল, ভবিষ্যতে এই বাংলারই কেউ যদি  এভারেস্টের সামিট পর্যন্ত বিনা- সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেনে  সত্যি সত্যিই যান ( আশা করি যাবেন), তাহলে তখন এই 'ইতি গজ' হেডলাইন গুলোর কী গতি হবে? 

এবং তার থেকেও বড় প্রশ্ন, ইন্দ্রবর্মার হাতির মত আরও কত সত্যিকার সম্ভাবনা আজকের যুধিষ্ঠিররা  হত্যা করবেন?  

No comments:

Discovering Ladakh’s Uncharted Petroglyphs : A Short Note

  Whispers on Stone: Discovering Ladakh’s Uncharted Petroglyphs We were trudging down a dusty trail by the frozen stream near the little v...