Thursday, July 28, 2022

হুইস্কি নিয়ে 'পিট'-পিটানি

পিট (Peat) ব্রিকস বানানোর কাজ চলছে। ছবিঃ findrarewhisky.com

এই লেখার নায়ক 'পিট' এবং গল্পের পটভূমিকা 'হুইস্কি'।  যদি 'পিট' সম্পর্কে আগ্রহী থাকেন তাহলে এই লেখার শেষে কয়েকটা লিংক দেওয়া আছে- সেগুলো পড়ে জানা আরম্ভ করতে পারেন। হুইস্কি না হয় নাই খেলেন- জানতে তো আর বাধা নেই। স্বয়ং মার্ক টোয়েন কী বলেছিলেন মনে আছে তো? সেই যে- “Too much of anything is bad, but too much good whiskey is barely enough.”

Wednesday, July 27, 2022

কে-টুতে কাতুকুতু

কে-টুরও কী শেষে এভারেস্টত্ব প্রাপ্তি হল?  কে-টুও মি টু বলল? k2 says 'me too'*? Blimey! 

কে-টু ও বলছে মি টু , ছবি সুত্রঃ ইন্টারনেট 

এভারেস্টে ফি-বছর ট্রাফিক জ্যাম দেখে এখন জনগণ অভ্যস্ত, তাই গত কয়েক বছর কেউ সেরকম 'গেল গেল' রব তোলেন নি। সয়ে গেছে। তাই বলে কে-টুতেও কাতুকুতু? এও দেখতে হল? 

'Savage Mountain'-এও সেই তারকেশ্বরে বাবার মাথায় জল ঢালার মত লাইন দেখে বিদগ্ধজনেরা সেরকমই বলছেন। 

ব্রায়ান হলের পোস্ট সুত্রঃ ফেসবুক 

নিমস দাইয়ের একটি পোস্ট শেয়ার করে ব্রায়ান হল ফেসবুকে লিখেছেন, "I am perplexed, and I am unable to process the importance of this ascent. Only time will put it in historical context. From when I was on K2 in 1986 and again in 2000 I can only see it as a different game to what I took part in. Mountaineering has become a goal orientated pursuit where style and ethics have been discarded by using the maximum resources available particularly for the clients, who totally rely on fixed ropes, oxygen and everything prepared and carried by a team of highly organised guides. Modern weather forecasts are also a game changer. I view it as (perhaps through outdated eyes), like competing in the Tour de France with an electric bike." 


সেলিব্রিটি ক্লাইম্বার নিমস দাজুর সেই ছবি, সুত্রঃ ইন্টারনেট 



লক্ষ লক্ষ ডলারের খেলা ব্রায়ান কাকা। অবাক হবার কী আছে? এমনটা তো হবারই ছিল। ভবিতব্য লেখা হয়েই গিয়েছিল যখন থেকে অ্যাডভেঞ্চার আর পাহাড় চড়াকে পণ্যে পরিণত করা শুরু হয়েছিল। এখন তো কোন এজেন্ট কত পারসেন্ট সামিট সাকসেস দিতে পারল তারই প্রতিযোগিতা চলবে, কে-টুতেও চলবে, পিওরিস্ট পাহাড়িয়াদের ভাল না লাগলেও চলবে- যেমন এতদিন চলছিল নেপাল এবং চীনের অন্যান্য ৮০০০ মিটারের পাহাড়গুলোতে।  

এই প্রসঙ্গে মনে পড়ল কয়েক বছর আগে ইন্টারনেটে একটা বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম। সেই বিজ্ঞাপনের ছবি এবং ক্যাপশন এখানে দিলাম- দেখুন, বিজ্ঞাপনের লাইন পড়ুন এবং বুঝুন- 

ওপরে বিজ্ঞাপনের ছবি এবং নীচে সেই সেলস পিচ- 

“What's an intrepid adventure traveler to do when they've already visited all seven continents, climbed Kilimanjaro, hiked the Inca Trail, and sailed the Galapagos Islands? Why, visit the North Pole of course!  Not many people realize that it is actually possible to make the journey to the very top of the world, but for those who are adventurous enough – and have plenty of cash..."

কী বুঝলেন কাকা? সব অ্যাডভেঞ্চার করে ফেলেছেন? কিলিমাঞ্জারো, ইনকা ট্রেল, গালাপাগোস দ্বীপ- সব 'করা' হয়ে গেছে? এবার কী করবেন ভাবছেন? কেন? এতে ভাবার কী আছে? চলুন এবার উত্তর মেরুটা মেরে দিয়ে আসি, কেমন? আরে উত্তর মেরু যাওয়া আর এমন কী ব্যাপার? আপনাকে একটু দুঃসাহসী হতে হবে, আর বেশ মোটা ম্যাপের ক্যাশ থাকতে হবে...ব্যস কেল্লা ফতে! 

যাই হোক, ব্রায়ান হলের পোস্টের থ্রেডে অনেকেই মন্তব্য রাখছেন। তবে তার মধ্যে আমার এক পরিচিত জন ইয়ান ওয়ালের কমেন্ট এখানে তুলে দিলাম- 



 

এদিকে আমার প্রিয় আর একজন দুর্ধর্ষ ক্লাইম্বার টিম ম্যাকার্টনি স্নেপ লিখেছেন-



ইস, এমন সত্যি কথা লিখে দিলেন ইয়ান এবং টিম? এখানে এসব লোকে সহ্য করবে না বলে দিলাম! 

যাইহোক, যাঁরা বাপের ভিটে এবং মায়ের গয়না বিক্রি কিংবা জনগণের কাছে ধার করে এজেন্সির প্যাকেজ না কিনলেও অ্যাডভেঞ্চার খুঁজে পান- তাঁদের জন্য স্বয়ং রেইনহোল্ড মেসনারের পরের কয়েকটা লাইন দেওয়া রইল- 

"Put on your boots and get going. If you've got a companion, take a rope with you and a couple of pitons for your belays, but nothing else. I'm already on my way, ready for anything - even for retreat, if I meet the impossible. I'm not going to be killing any dragons, but if anyone wants to come with me, we'll go to the top together on the routes we can do without branding ourselves murderers." ( Reinhold Messner, Murder of the Impossible) 


আর এই বিষয়ে এই অধমও কয়েক বছর আগে একটা পুরদস্তুর টেড-এক্স টক দিয়ে ফেলেছিল। সেটার লিংকটাও এখানে দিয়ে দিলামঃ 




তাহলে ভেবে দেখুন, আপনার অ্যাডভেঞ্চার কেমন হওয়া উচিৎ? আপনি ঠিক কী চান? মেকি গৌরবের দাম্ভিক হুংকার ? নাকি একটা সহজ, সরল, ওরিজিনাল, অর্থপূর্ণ অ্যাডভেঞ্চার? 


(* I have no intention to trivialise the original connotation of the Me Too movement)

Saturday, July 23, 2022

অনেক কিছুর জন্যই কৃতজ্ঞ, তবে কফির জন্য বিশেষ করে

মাঝেমাঝে রাতে-র ঘুম ভাঙার আগেই আমি জানলার পাশে এসে দাঁড়াই। মনে হয় একটানা অনেকক্ষণ গভীর হবার পর একসময় ফিকে হতে হয় রাতকেও। তখন তার মধ্যে এক প্রশান্ত নীরবতা কাজ করে। কখনোসখনো, সেই নীরবতার মধ্যে এক অদ্ভুত উচ্চতা খুঁজে পাই আমি। তখন তাকে খুব পরিচিত মনে হয়।  মনে হয়, কেবল পাহাড়ের চুড়াতেই, এই উচ্চতাকে অনুভব করেছি আমি। কিন্তু বেলুড়ের গঙ্গার ধারের এই ভাঙা জানলায়, মাঝেমাঝে সেই উচ্চতা নেমে আসে কী করে? মুগ্ধ বিস্ময়ে আমি হতবাক হয়ে যাই। 

আসলে জীবনের প্রতি মুহূর্তে একটা উচ্চতা খুঁজে চলি আমি। একেবারে নাছোড়বান্দার মত। তাই হয়ত একটু বিরক্ত হলেও, সে আমার জানলায় দেখা দিয়ে আবার কোথায় যেন চলে যায় এক অন্যমনস্ক ব্যস্ততায়। এদিকে একটানা কিছুদিন একজায়গায় থাকলেই আমার মন অসম্ভব চঞ্চল হয়ে পড়ে। কারণ আমি জানি এই জীবন আর বেশী দিন নেই। সময় সীমিত, তাই দুচোখ ভরে দেখে নিতে চাই এই পৃথিবী, অজানা পাহাড়-নদী এবং আরও অচেনা তার মানুষকে। বিচক্ষণেরা জানিয়েছেন  এ আমার এক রোগ। সেই বিচক্ষণদের জানাই, কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী  তো সেই কবেই এই ব্যাধির কথা বিস্তারে লিখে গেছেন।  (কবির ডায়াগনোসিসের লিংক এখানে দিয়ে রাখলাম- 'এরিক শিপটনের ব্যাধি'। )

তাই স্বীকার করতে দ্বিধা নেই- আমি অ্যাডভেঞ্চারেই বাঁচি। তাই, এরিক শিপটনের ব্যাধিতেই আমার মুক্তি। 

তবে সব সকালে আমার জানলায় সেই উচ্চতা খুঁজে পাইনা। তখন মগজের রিসেপটর কোষগুলোতে লেপটে শুয়ে থাকা অ্যাডিনোসিনের দলকে একটা ধাক্কা দিয়ে সরানোর প্রয়োজন হয়। তখন আমি খোঁজ করি এমন একটা অ্যালকালয়েডের, যে আমার রক্তে মিশে যাবে। একই রকম দেখতে বলে, মস্তিষ্কের রিসেপটর কোষগুলো অ্যাডিনোসিন ভেবে হাত মেলাবে তাদের সঙ্গে। ব্যস, ঘুম পাড়ানি অ্যাডিনোসিন গুলোকে সরিয়ে তাদের জায়গা নেবে ক্যাফিন। আমার সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম এবার সজাগ হয়ে উঠবে। নিজের শরীরের সঙ্গে এ এক প্রাত্যহিক প্রবঞ্চনা। অ্যাড্রেনালিন অবশ্য বলবে, যাক বাবা, বাঁচালে! ভাগ্যিস ক্যাফিন ছিল। একা আর কতদিক সামলাব?

থ্যাংক ইউ গড ফর কফি!  



Thursday, July 21, 2022

অরণ্যে রোদন


সবসময় নয়, তবে মাঝেমধ্যে কিছু লেখার একটা তাগিদ আমার মধ্যে কাজ করে বলেই একসময় https://himalaya-raja.blogspot.com/  এই ব্লগ পেজটা খুলেছিলাম। নাম দিয়েছিলাম- 'Soliloquy of a Wandering Pilgrim or In Dialogue with Destiny' । 

স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে এটি একটি বিচিত্র নাম। এই বলছি 'সলিলোকি', আবার পরমুহুর্তে বলছি 'ডায়ালগ'। আসলে আমার মনে হয়েছিল স্বগতোক্তিও একধরণের আলাপচারিতা হতে পারে- হোক না তা নিজের সঙ্গেই। নিজের ব্লগে লিখতে পয়সা লাগে না এবং কাউকে জবাবদিহিও করতে হয় না! তাই জন্যই আমার এই ব্লগ পেজ।  নিজের যা খুশী, যখন খুশী লিখব- এই ভেবেই খুলেছিলাম। আবার যদি কোনদিন ইচ্ছে হয় তখন বন্ধ করে দেব লেখা। কেউ তো মাথার দিব্যি দেয়নি যে লিখতেই হবে।   

সেইরকমই একটা ছোট লেখা কয়েকদিন আগে লিখেছিলাম এখানে। নাম দিয়েছিলাম-'ইন্দ্রবর্মার হাতি'। বাংলার পর্বতারোহণের ভাগ্যাকাশে ঘটে যাওয়া ইদানীংকালের একটা ভেল্কিবাজি ছিল সেই লেখার বিষয়। (প্রসঙ্গান্তরে বলে রাখি বাংলার আট হাজার মিটারি পর্বতারোহণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে এরকম আরও বেশ কিছু ভেল্কিবাজির ঘটনা রয়েছে) 

যাইহোক, ইন্দ্রবর্মার সেই হাতি নাকি পর্বতারোহীঠাসা দুয়েকটা সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপেও পৌঁছেছিল।  কিন্তু সেই লেখা পড়ে কারও কিছু আসে যায়নি। কেউ কোন মন্তব্যও করেননি- স্রেফ অগ্রাহ্য কিংবা উপেক্ষা করে গেছেন। পাহাড়িয়া লোকজনের এইরকম নির্বিকল্প সমাধী দেখে আমার কয়েকজন হিমালয়প্রেমী বন্ধু অবাক হলেও, আমি হইনি। বরং ভারী আমোদ হয়েছিল এই ভেবে যে- বাংলার পর্বতারোহণ জগতে আমার 'ইন্দ্রবর্মার হাতি' ইংরাজি  বাগ্ধারা '(The) Elephant in the room'- এর সত্যতা প্রায় আক্ষরিক অর্থেই প্রমাণ করতে সফল হয়েছে। 

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ 

আসলে গোড়ায় গলদ হয়েছে 'মাউন্টেনিয়ারিং ট্যুরিজম' এবং 'মাউন্টেনিয়ারিং'- এই দুটো ব্যাপারকে জনমানসে সমার্থক হয়ে যেতে দেওয়ায়।  সোনা এবং সোনার পাথর বাটিকে তো একই গোত্রে ফেলে দিয়েইছো- এবার বোঝো ঠ্যালা!  কী ভাবে এই ভাবের ঘরে চুরি হল সেই নিয়ে একটা বিস্তারিত আলোচনা অন্যত্র করা যেতে পারে এবং পাঠকদের মধ্যে কেউ এই নিয়ে সত্যিই পড়াশুনো করতে চাইলে অনেক উপাদান তাঁদের নাগালের মধ্যেই পেয়ে যাবেন। 

তাই আর বিশদে না গিয়ে বলতে চাইছি, মধ্যমেধার নবজাগরণ, সোশ্যাল মিডিয়ায় তার অসীম ক্ষমতায়ন এবং তার গণ-উদ্‌যাপনের ফলে আর পাঁচটা বিষয়ের মতই নাভিশ্বাস উঠেছে পর্বতারোহণের দর্শনেরও। ম্যালোরির ‘বিকজ় ইট ইস দেয়ার’ কিংবা চেস্টারটনের ‘থিং’ — সবকিছুরই প্রকৃত অর্থ হারিয়ে গেছে। একটা অস্পষ্ট দর্শনের ( Philosophy of fuzziness) পতাকা পতপত করে উড়ছে সর্বত্র। তাই 'almost done' টাও 'done' হয়ে যাচ্ছে নির্বিরোধে এবং নির্বিচারে চলে আসছে সংবাদ শিরোনামে। একটা মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে সত্যে। 

হাই- অলটিচিউড মাউন্টেন ট্যুরিজম ভালো, পর্যটন শিল্পের জন্য ভালো, পর্যটন কর্মীদের জন্য ভালো, পাড়ায় ফিরে কলার তুলে হাতির পিঠে চেপে সম্বর্ধনা নেবার জন্য ভালো- কিন্তু তাই বলে টুরিস্ট মাউন্টেনিয়ার কখনই প্রকৃত মাউন্টেনিয়ার হয়ে যায় না। জেফ বেজোস কিংবা ইলন মাস্কের রকেট চেপে মহাকাশ সফর সেরে এলেই যেমন কেউ নভশ্চর হয়ে যান না, ঠিক সেরকম কোন ট্র্যাভেল এজেন্সির প্যাকেজ ট্যুরে এভারেস্ট ( এবং তারপর ফি-বছর আরও ৮০০০ মিটারি) চড়েও কেউ মাউন্টেনিয়ার হয়ে যান না। 

তবে কিছুটা দুঃখজনক  স্বান্তনার কথা হল যে, এই টুরিস্ট ক্লাইম্বিং-এর উপদ্রব কেবল বাংলায় নয়, সারা বিশ্বেই বেড়েছে কমবেশি।  এই সামুহিক অবক্ষয়ের অভিমুখ দেখেই ২০০২ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইম্বিং অ্যান্ড মাউন্টেনিয়ারিং ফেডারেশন (Union Internationale des Associations d'Alpinisme- UIAA) এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন যা আজ ‘দি টিরল ডিক্লেয়ারেশন’ নামে পরিচিত টিরল ঘোষণায় একটা কথা পরিষ্কার ভাবেই বলা হয়েছেবিপদ এবং অনিশ্চয়তা ব্যতীত ক্লাইম্বিং তার প্রকৃত পরিচয়তার সংজ্ঞায়িত উপাদান হারায়— এবং তা হল অ্যাডভেঞ্চার Without danger and uncertainty climbing loses its defining element-adventure”। 

এজেন্সিরা যে প্যাকেজগুলি বিক্রি করেন তার নাম 'অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম', 'অ্যাডভেঞ্চার' নয়- তা সে মাউন্ট এভারেস্টও হতে পারে, সেভেন সামিটস হতে পারে, আবার এক্সপ্লোরার্স গ্র্যান্ড স্ল্যাম-ও হতে পারে।  যেমন গালভরা প্যাকেজের নাম, তেমনই যুতসই তার দাম।  এই পদ্ধতিতে পাহাড় চড়ে (কিংবা মেরু বিজয় করে) কারও ব্যক্তিগত শখ মেটে বটে, তবে তা সমাজকে কিছু দেয়না। তাই কেউ নিজের কিডনি বেচে, কিংবা বাপের জমি বন্ধক রেখে  এজেন্সিকে পয়সা দিতে পারছে, কি পারছে না, তা কখনই একটা সামুহিক বিবেচ্য বিষয় কিংবা সামাজিক দায়বদ্ধতার পরিচায়ক হওয়া উচিৎ নয়।  

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

কিন্তু এতসব কিছু জানা সত্ত্বেও যখন সেই টুরিস্ট ক্লাইম্বিং-কেই একটা সমাজ ফুলমালা দিয়ে, রেকারিং ডেসিম্যালের মত  বরণ করে নিতেই থাকেন, তখন প্রশ্ন জাগে আমরা কি সত্যিই খাঁটি জিনিষ পেতে আগ্রহী? 

নাকি, আমাদের সামুহিক হতাশা এবং দূর্দশা আজ এতটাই যে 'নাকের বদলে নরুন' পেয়েই আমাদের এই গণ টাক-ডুমা-ডুম  উৎসব সমানে চলিতেছে? 

আবার কখনও এও মনে হয়, আজ আমাদের পাহাড়িয়া সমাজ সেই  'ম্যাড কাও' রোগে আক্রান্ত গরুটি যে নিজের স্বরূপ ভুলেই গেছে এবং তাই তার আর কোন দুশ্চিন্তাও নেই এবং স্বাভাবিকভাবেই সে সব কিছুর উর্দ্ধে এক তুরীয় অবস্থায় পৌঁছে গেছে।

"সুখী, সবাই সুখী, জয় তারা!"  

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~




Monday, July 18, 2022

ইন্দ্রবর্মার হাতি


আমরা জানি, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অশ্বত্থামা ছিলেন কৌরবদের পক্ষে। এদিকে ছেলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন না বলেই গুরু দ্রোণও কৌরবদের পক্ষেই দাঁড়ান।  যথারীতি, যুদ্ধে দ্রোণাচার্য অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। পাণ্ডবদের মধ্যে ওঠে ত্রাহি ত্রাহি রব। তখন শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডবদের বলেন কোনও ভাবে যদি গুরু দ্রোণের কানে অশ্বত্থামার মৃত্যুর 'ভুল' খবর পোঁছানো যায় তাহলে দ্রোণ আর মারদাঙ্গা করবেন না। আর সেই সুযোগে, ধৃষ্টদ্যুম্ন তাঁকে হত্যা করবে। 

প্ল্যানমাফিক, ভীম মালবরাজ ইন্দ্রবর্মার অশ্বত্থামা নামক একটি নিরীহ হাতিকে হত্যা করেন এবং সেই হত্যার সাক্ষী রাখা হয় যুধিষ্ঠিরকে। সবাই জানত, আচার্য্য দ্রোণ, আর যাই হোক যুধিষ্ঠিরের কথাকে অবিশ্বাস করবেন না, কারণ তিনি একজন বেঞ্চমার্ক সত্যবাদী ছিলেন কিনা। ব্যস, এরপর একজন নিষ্ঠাবান সাংবাদিকের মত যুধিষ্ঠির দ্রোণকে জানান যে, 'অশ্বত্থামা হতঃ- ইতি গজ'। 

কিন্তু সেই সংবাদ পরিবেশনে একটা মোক্ষম চাল ছিল। যুধিষ্ঠির, 'অশ্বত্থামা  হত'- এইটুকু চেঁচিয়ে বলেন এবং 'ইতি গজ' - টুকু বলেন স্বর নামিয়ে, মিনমিন করে। একে বয়স হয়েছে, তার ওপর ধুন্ধুমার ধর্মযুদ্ধ চলছে, তার মধ্যে খোলা মাঠে একটু দূর থেকে যুধিষ্ঠির চেঁচিয়ে কীসব বলছে। স্বাভাবিক ভাবেই ঐ 'ইতি গজ'  অংশটুকু  দ্রোণাচার্য্য আর শুনতে পাননি।  

এর ফল কী হয়েছিল আমরা আজ তা সকলেই জানি। 

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ 

সম্প্রতি কাগজের হেডলাইন জানিয়েছে বোতলের অক্সিজেন ব্যবহার না করেই নাকি একজন বাঙালি মাউন্ট এভারেস্টে উঠে পড়েছেন। খুবই আনন্দের কথা। কিন্তু, হেডলাইন টপকে মূল খবরের মধ্যে ঢুকে দেখি লেখা আছে ব্যাপারটা নাকি ঘটেছে  - 'almost'- 'প্রায়'। অর্থাৎ, উনি পুরো রাস্তাটা বোতলের অক্সিজেন ছাড়া  মোটেই ওঠেননি- বরং আরোহণের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেনের সাহায্য নিয়েই উঠেছেন। 

এদিকে আমাদের সাংবাদিকেরা তাঁকে গ্রেস মার্ক দিয়ে পাস করিয়ে দিয়েছেন। ভাবখানা এরকম যে, "আহা, আর একটু হলে তো উঠেই পড়ত! যেটুকু করেনি সেটা আব্বুলিশ!"  অনেকটা সেই 'ইতি গজ' টাইপের ব্যাপার আর কী! 

অবশ্য, সেযুগের যুধিষ্ঠিরের তুলনা এখনকার সাংবাদিকদের সঙ্গেই একমাত্র চলে। বর্তমান যুগের সত্যনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার কথা তো সকলেরই জানা। এই সাংবাদিকেরা তাই সময় সুযোগ পেলেই সেই সুপ্রাচীন 'ইতি গজ' পদ্ধতি তাঁদের 'নিজেদের ধর্মযুদ্ধের' খাতিরে প্রয়োগ করে থাকেন। তাঁদের লেখা হেডলাইনের বিজয় ঘোষণায় হৈহৈ পড়ে যায়। সেই হুল্লোড়ে 'প্রায়' ব্যাপারটা কোথায় যেন ভেসে যায়। 

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ 

এখন প্রশ্ন হল, ভবিষ্যতে এই বাংলারই কেউ যদি  এভারেস্টের সামিট পর্যন্ত বিনা- সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেনে  সত্যি সত্যিই যান ( আশা করি যাবেন), তাহলে তখন এই 'ইতি গজ' হেডলাইন গুলোর কী গতি হবে? 

এবং তার থেকেও বড় প্রশ্ন, ইন্দ্রবর্মার হাতির মত আরও কত সত্যিকার সম্ভাবনা আজকের যুধিষ্ঠিররা  হত্যা করবেন?  

Discovering Ladakh’s Uncharted Petroglyphs : A Short Note

  Whispers on Stone: Discovering Ladakh’s Uncharted Petroglyphs We were trudging down a dusty trail by the frozen stream near the little v...