Skip to main content

পর্বতারোহণঃ একটি ছিন্নডানা স্বপ্ন - দ্বিতীয় পর্ব

পর্বতারোহণঃ একটি ছিন্নডানা স্বপ্ন - দ্বিতীয় পর্ব 

অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় 

(লেখকের মন্তব্যঃ এই লেখাটি দেশ পত্রিকায় ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়েছিল। সম্পাদকের অনুমতি নিয়ে এবার নিজের ব্লগে দুটি পর্বে প্রকাশ করলাম। এটি  দ্বিতীয় পর্ব। কৃতজ্ঞতা এবিপি প্রাইভেট লিমিটেড। ) প্রথম পর্বের লিংক



বিশ্বের প্রেক্ষাপটে পর্বতারোহণের সেই প্রতীক্ষিত উত্তরণের অধ্যায় শেষ পর্যন্ত না আসার কারণটা অবশ্য বাংলা কিংবা ভারতের মাটিতে বেনো জল ঢোকার মতো সরল নয়। বিষয়টি যেহেতু অনেকটাই ইতিহাসনির্ভর তাই এডওয়ার্ড হোয়াইম্পার এবং ম্যাটারহর্ন পাহাড়ের প্রসঙ্গ আসা অবশ্যম্ভাবী ১৮৬৫ সালে হোয়াইম্পারের নেতৃত্বে ম্যাটারহর্ন শিখর আরোহণকেই ইতিহাসকাররা মোটামুটি ভাবে ইওরোপিয়ান অ্যাল্পিনিজম তথা পর্বতারোহণের জন্মলগ্ন হিসেবে ধরে থাকেন। সেই আরোহণের পর এডওয়ার্ড হোয়াইম্পার লিখেছিলেন, “পৃথিবী আমাদের পদতলে ছিল এবং ম্যাটারহর্নকে আমরা জয় করে ফেলেছিলাম” আজকাল বেশ কিছু পর্বতারোহী বন্ধু (তাদের মধ্যে ভারতীয় প্রায় নেই বললেই চলে) অবশ্য বলে থাকেন, তাঁরা আর সামিটে দাঁড়িয়ে পতাকা ওড়ানোর ধার ধারেন না। তাঁদের কাছে আরোহণের বিশুদ্ধতাটাই মোক্ষ। ‘কী ক্লাইম্ব করছির থেকে কী ভাবে ক্লাইম্ব করছি’- এটাই তাঁদের আনন্দ এবং প্রাপ্তির মাপকাঠি এবং মাইলফলক। তাছাড়াও, তাঁরা এমন কিছু বলতে বা করতে চান না যাতে তাঁদের একান্ত ব্যক্তিগত অ্যাডভেঞ্চার ‘মানুষ প্রকৃতিকে জয় করল’ গোছের এক মুখোশ পরে জনসমক্ষে এসে দাঁড়ায়তাঁরা মনে করেন, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ থেকে বিংশ শতাব্দী জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অভিযাত্রীদের ভূরিভূরি ‘তথাকথিত’ বিজয়গাথা সাধারণভাবে প্রকৃতি এবং বিশেষভাবে স্থান-কাল-পাত্রের প্রতি এক সীমাহীন অবজ্ঞার প্রতীক। কারণ, বিজিত পাহাড়ের প্রাচীন, স্থানীয় নাম বদল করেই এইসব অভিযাত্রীরা ক্ষান্ত হননি, যে-মালবাহক এবং স্থানীয় গাইডের হাত ধরে তাঁরা তাঁদের অভীষ্টের কাছে পৌঁছেছিলেন, তাদের অবদান, তাদের গল্প, তাদের সংগ্রামের কথা একরকম অদৃশ্যই রেখেছেন সংশ্লিষ্ট অভিযানের বিবরণে এবং সাহিত্যে এ তো নেহাত আনমনে ভুলে যাওয়া নয়, বরং জাত্যাভিমানে মদমত্ত এক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিসন্ধি। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, হিমালয় জুড়ে এরিক শিপটন এবং বিল টিলম্যানের দুর্দান্ত সব কীর্তি তো আজ হিমালয়সাহিত্যের পাঠক মাত্রেই জানেন, কিন্তু যে তিনজন শেরপা ছাড়া অসম্ভব ছিল তাঁদের অভিযান সফল হওয়া, সেই পাসাং, কুসাং এবং আং থারকের কথা তাঁরা তো বিশদে কখনই কোথাও লেখেননি! এরকম উদাহরণ বিস্তর রয়েছে, তবে আপাতত এই একটিই যথেষ্ট

আজ আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি, যখন সময়ের সরণি বেয়ে মানবজাতির প্রতিটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত এবং ফলস্বরূপ বদলে যাওয়া জীবনযাত্রার অভিমুখ আমাদের নতুন করে, গভীর ভাবে ভাবতে এবং পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করছে। পর্বতাভিযান যেহেতু কোনও ইতিহাসবহির্ভূত ঘটনা নয়, তাই বিশ্লেষণ এবং পুনর্মূল্যায়নের জরুরি তালিকায় সেটিও পড়ে। বিশ্বের কিছু শিক্ষিত, সমাজসচেতন পর্বতারোহীর কাছে মাউন্টেনিয়ারিং আর কেবল ‘পাহাড়-পাহাড় খেলা’ নয়। যে-অভিযানের মধ্যে পরিবেশের প্রতি সচেতন দায়িত্ববোধ, সামাজিক মূল্যবোধ, মানবিক মমত্ব এবং শিক্ষার অবকাশ নেই, সে অভিযান ভ্রান্ত, সে অ্যাডভেঞ্চার পথভ্রষ্ট এবং অপ্রয়োজনীয়। তাঁদের মতে, একটা আরোহণের বিচার হওয়া উচিত পরিবেশের ওপর সেই অভিযানের প্রভাব, মালবাহকদের শ্রম, শেরপাদের করা ফিক্সড রোপ এবং সেই অভিযান থেকে কোনও সুদূরপ্রসারী ভাল কাজ কিংবা শিক্ষার সূত্রপাতের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে। বিগত শতাব্দীর কলোনিয়াল ঘরানার পর্বতাভিযান, যা আসলে ঔপনিবেশিকদের সাম্রাজ্যবিস্তার ষড়যন্ত্রের অন্যতম একটি অস্ত্র ছিল, তাকে আজকের দিনেও কেন আমরা খোলা ছাড়পত্র দেব কেবলই গুণকীর্তনে? শিক্ষা নিশ্চয়ই নেব সেই সব অভিযান থেকে, তবে প্রশ্নাতীত কেন থাকবে তাঁদের উদ্দেশ্য এবং কাজকর্ম? এমন অনেক কঠিন প্রশ্ন তুলে ধরে, পাশ্চাত্যের পর্বতারোহণ চর্চায় ইদানীংকালে আলোড়ন তুলেছেন পর্বতারোহণ স্কলার অমৃতা ধর। অমৃতার যুক্তিগুলি গবেষণালব্ধ, ফলে অকাট্য। তাই কেউ-কেউ পাশ কাটিয়ে গেলেও, মূলত সাদাচামড়া অধ্যুষিত বিশ্ব পর্বতারোহণের দুনিয়ার বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার কাজটি অমৃতা করে দিয়েছেন

এ প্রসঙ্গে তরুণ ব্রিটিশ চিত্রকর রিচার্ড টি ওয়াকারের ২০১৫ সালের কাজ ‘দি ফলিবিলিটি অফ ইনটেন্ট’ উল্লেখযোগ্য। ওয়াকার এই কাজটি করেছেন আর্কাইভাল পিগমেন্ট প্রিন্টে এবং মূল উপাদান হিসেবে বেছে নিয়েছেন হোয়াইম্পারের ১৮৭১ সালের বই ‘স্ক্র্যাম্বলস অ্যামংস্ট দি আল্পস’-এ ব্যবহৃত ম্যাটারহর্নের একটি সাদাকালো ছবি। ওয়াকার বইয়ের ছবিটিকে কেটে বসিয়েছেন তাঁর ক্যানভাসের উপত্যকায়, আর তারপর তার শীর্ষবিন্দুটিকে ঢেকে দিয়েছেন এক গাঢ় লাল ভাসমান বৃত্তে ম্যাটারহর্ন পাহাড়ের ভূগোল বদলে দিয়ে শিল্পী চেয়েছেন পর্বতারোহণের চিরাচরিত ঔপনিবেশিক প্রবণতা এবং আকাঙ্ক্ষাগুলিকে অস্বস্তিতে ফেলে দিতে। দর্শক বুঝতে পারছেন লাল বৃত্তটি ম্যাটারহর্নের শিখরকে আড়াল করে রেখেছে, কিন্তু দেখতে পাচ্ছেন না। শিল্পী বলতে চেয়েছেন, যুদ্ধজয়ের কায়দায়, যে-কোনও মূল্যে পাহাড়ের চুড়ায় দাঁড়িয়ে বিজয় ঘোষণা করতে হবে— পর্বতারোহীদের মধ্যে চলতে থাকা এই প্রবণতাটিই একটি গড্ডলিকাপ্রবাহ এবং এও এক ধরনের ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকারতাঁর মতে, শিখর দেখতে পেলেই তার মাথায় যেন তেন প্রকারেণ উঠে পড়ার ট্র্যাডিশন আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক মনে হলেও ঐতিহাসিকভাবে তা ভ্রমশীল। শিখর আড়াল করে থাকা ওয়াকারের লাল বৃত্ত তাই অনেকটাই রহস্যের অবকাশ, নিজেকে নতুন করে আবিষ্কারের সুযোগ এবং প্রতিরোধের চিহ্ন। তাহলে কি বিশ্বের পর্বতারোহণের সেই অধ্যায়, যার আসার কথা ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসতে পারেনি, তার অসাফল্য এইরকম এক ভ্রান্ত, অন্তঃসারশূন্য উত্তরাধিকারের ভার নীরবে বয়ে চলারই পরিণাম? নাকি, চিন্তাহীন অপরিণামদর্শিতা ছাড়াও অন্য কোনও বাড়তি ফ্যাক্টর এখানে কাজ করেছে?

 

অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের আস্ফালনে আমাজনের কায়াপো, সিকিমের লেপচা, কেনিয়ার মাসাই, চিনের ঈ, কালাহারির বুশম্যান, এবং গ্রিনল্যান্ডের ইনুইট আজ নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতি ভুলতে চলেছে। ‘কর্পোরেট গ্রিড ওভার হিউম্যান নিড’-এর সন্ত্রাসে প্রকৃতি আজ বিধ্বস্ত, জীববৈচিত্র সন্ত্রস্ত ইউনিফর্মিটির সঙ্গে সম্মুখসমরে ডাইভার্সিটি পরাস্ত। মধ্যমেধার নবজাগরণ এবং তার গণ-উদ্‌যাপনের ফলে আজ ঠিক একই ভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি নাভিশ্বাস উঠেছে পর্বতারোহণের দর্শনেরম্যালোরির ‘বিকজ় ইট ইস দেয়ার’ কিংবা চেস্টারটনের ‘থিং’ (যেটি আসলে কোন একটি বিষয় সম্বন্ধে মানুষের ধ্যানধারণা এবং সেই ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে সেই মানুষটির আচার-ব্যবহারের একটি অভিজ্ঞতালব্ধ আলোচনা) — সবকিছুরই প্রকৃত অর্থ হারিয়ে গেছে। পর্বতারোহণ দুনিয়ার এই সামুহিক অবক্ষয়ের অভিমুখ দেখেই ২০০২ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইম্বিং অ্যান্ড মাউন্টেনিয়ারিং ফেডারেশন (Union Internationale des Associations d'Alpinisme- UIAA) এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন যা আজদি টিরল ডিক্লেয়ারেশননামে পরিচিত টিরল ঘোষণায় একটা কথা পরিষ্কার ভাবেই বলা হয়েছে, বিপদ এবং অনিশ্চয়তা ব্যতীত ক্লাইম্বিং তার প্রকৃত পরিচয়, তার সংজ্ঞায়িত উপাদান হারায়— এবং তা হল অ্যাডভেঞ্চার Without danger and uncertainty climbing loses its defining element-adventure”

এদিকে বিশ্বের পর্বতারোহণ ম্যাপে যুক্ত হয়েছে নতুন এক শ্রেণি এঁরা নিজেদের মাউন্টেনিয়ার কিংবা অ্যাল্পিনিস্ট নয়, পরিচয় দিচ্ছেন মাউন্টেন অ্যাথলিটহিসেবে একের পর এক শিখর জুড়ে, তা আল্পসই হোক কিংবা হিমালয়, গত দশ বছরে আমরা যে স্পিড রেকর্ড ভাঙার প্রতিযোগিতা দেখছি, তাতে একটাই প্রশ্ন বারবার ফিরে আসছে। পর্বতারোহণ কি অলিম্পিক গেমসের একটা ইভেন্টে পরিণত হয়েছে? ২০১৩ সালে, এভারেস্টের লোৎসে ফেসে উয়েলি স্টেক-সিমোনে মোরোদের সঙ্গে শেরপাদের হাতাহাতি-রেষারেষি পৃথিবীর সামনে এক চরম অস্বস্তিকর চিত্র তুলে ধরেছে। ঘটনাটি, এভারেস্টে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিবছর রুজিরুটির তাগিদে ফিরে আসা শেরপাদের সংগ্রামের সঙ্গে এ যুগের মাউন্টেন অ্যাথলিটদের গ্যালারি শট নেবার প্রবণতার একটি প্রত্যক্ষ সংঘর্ষ। ফি বছর আরও বিচিত্র, আরও কঠিন, আরও দ্রুত গতির কিছু চমক জাগানো ক্লাইম্ব করাকে উয়েলি স্টেক বলতেন তাঁর ‘বিজনেস’। এভারেস্টের সেই তিক্ত ঘটনার পর ‘দি নিউ ইয়র্কার’ পত্রিকাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে উয়েলি স্টেক বলেছিলেন, “To make business, you need stories. To create stories, you need to come up with projects—bigger and bigger ones with each passing years—and then you need to succeed at them” ২০১৭ সালে নুপৎসে শিখরে যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় উয়েলি স্টেক শেষ পর্যন্ত মারা গেলেন তার জন্যও সেইবিগার অ্যান্ড বিগারপ্রজেক্ট করার দর্শন দায়ী বইকি আজ ইন্টারনেট জুড়ে প্রতিনিয়ত এক-একজন স্পনসরড মাউন্টেন অ্যাথলিটেরবিগার অ্যান্ড বিগার-এর পিছনে ছোটা দেখে তাই কখনই বিখ্যাত ইতালীয় অ্যাল্পিনিস্ট ওয়াল্টার বোনাত্তির সেই উক্তি মনে পড়ে না: “What is there, beyond the mountain, if not the man?” একইভাবে, ইদানীংকালে হিমালয়- কারাকোরামে অভিযানগুলোর খবর দেখলে বা শুনলে বোঝা যায়, প্রচার পাবার মরিয়া প্রচেষ্টায় দলগুলি যা-খুশি তাই করতে প্রস্তুত। প্রাথমিক ভাবে স্পনসর জোগাড় এবং তারপর সেই স্পনসরকে টিকিয়ে রাখার তাড়নায় আজকের একশ্রেণির পর্বতারোহীরা মোটা দাগের চিত্রনাট্য শুধু নয়, প্রাণের বাজি রাখতেও রাজি। আট হাজার মিটারের পাহাড় হোক কিংবা আল্পসের কোনও নর্থ ফেস, খবরে থাকার জন্য এই পর্বতারোহীরা যে-কোনও মাদারি-কা-খেল দেখাতে প্রস্তুত। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন একটাই উঠে আসে, এঁদের পর্বতারোহণের মুখ্য উদ্দেশ্য তাহলে আজ কোন পর্যায়ে নেমে এসেছে? ব্যক্তিগত সন্তুষ্টি? রাতারাতি সেলিব্রিটি হবার প্রলোভন? উয়েলি স্টেকের ‘বিগার অ্যান্ড বিগার’? নাকি, বিশ্বের কাছে নতুন কিছু প্রমাণ করে দেখানোর তাগিদ?

তবে বিশ্বের প্রেক্ষাপটে সেই স্বপ্নের প্রত্যাবর্তনের আশার পাল্লা ভারী কারণ, বাংলা তথা ভারতে যখন পর্বতারোহণ জগতের কলকাঠি নাড়েন অপদার্থের দল, ওদের পর্বতারোহণ জগতের মূলস্রোতে এখনও বিচরণ করেন পিউরিস্ট, ক্লাসিক ঘরানার অভিযাত্রীরা জেরলিন্ডে কাল্টেনব্রুনারের সঙ্গে কে-টু আরোহণ করা পোলিশ পর্বতারোহী দারিউস জালুস্কি ২০১৯ সালে আমাকে বলেছিলেন, “পাহাড় আমার স্টেডিয়াম নয়, পাহাড় আমার থিয়েটার দারিউসের কথায় আমার মনে পড়েছিল, ১৯৮৫ সালে গাশেরব্রুম-৪ শৃঙ্গের পশ্চিম দেওয়ালে আটকে পড়া আর এক পোলিশ পর্বতারোহী ভয়টেক কুর্তিকার কথা কুর্তিকা এবং রবার্ট শাউয়ার সেবার ওয়েস্ট ফেস ক্লাইম্ব করে ফেলেছিলেন, কিন্তু শিখর তখনও দূরে ছিল কুর্তিকা বুঝতে পেরেছিলেন, আর এগোলে মৃত্যু নিশ্চিত তাই দু’জনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নেমে আসার সামিটে না গেলেও বিশ্বের পর্বতারোহী মহল তাঁদের এই ক্লাইম্বকে অসম্পূর্ণ বলেননি সেই প্রসঙ্গে কুর্তিকা বলেছিলেন, “এর থেকে বোঝা যায়, অ্যাল্পিনিজম আসলে স্পোর্টনয়, এটি একটি আর্ট Only in art does a missing link contribute to the meaning of a piece” অসম্ভবের সীমারেখায় ছবি আঁকা এই ক্লাইম্বিং রুট দেখে কেউ কেউ একে শতাব্দীর সেরা ক্লাইম্বতকমা দিতে চেয়েছিলেন তার জবাবে কুর্তিকা বলেছিলেন, “কোনও একটি বিশেষ কবিতাকে কি কখনও শতাব্দীর সেরা কবিতা বলা যায়?” তাই, কুর্তিকা এবং দারিউসের দেখানো দর্শনের ওপর ভরসা রেখে, আজ মনে হয় আবার নতুন করে এক সরল এবং নান্দনিক স্বপ্ন দেখা শুরু করা যায়। ভেবে নেওয়াই যায়, জয়পতাকা ওড়ানোর অভিপ্রায়ে নয়, আবার একদিন বাংলায় সেদিন আসবে যেদিন অভিযান হবে নির্ভেজাল আনন্দের খোঁজে। নিজেদের ক্ষমতা, শৈলী এবং অভিজ্ঞতার ওপর ভর করে প্রথমে ছোট ছোট শৃঙ্গ দিয়ে হাত পাকাবেন তাঁরা। তারপর একদিন কেবল গুটিকয় বন্ধু মিলে, পেল্লায় স্যাক কাঁধে তুলে নিয়ে, অপেক্ষাকৃত উঁচু পাহাড়ে, কঠিনতর ক্লাইম্বিং চ্যালেঞ্জের সন্ধানে পাড়ি দেবেন ঠিক যেমন ভাবে একদিন ফিনিক্সের মতো, পোলিশ অভিযাত্রীরা তাঁদের যাত্রা শুরু করেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের বুক থেকে। পর্বতারোহণ সেদিন হবে আত্মিক উত্তরণের সোপান, বেঁচে থাকার উদযাপন— আ সেলিব্রেশন অফ লাইফ ইটসেলফ।

 

সমাপ্ত

Illustration courtesy: Freevector

Comments

Popular posts from this blog

Across The Sahara on a Bicycle

Across The Sahara on a Bicycle Between the things we get And the things we celebrate Flows a desert                            Lest we forget. #SaharaQuartet Background: My Africa My first exposure to the real Africa in 2005 after climbing Kilimanjaro. Scanned from slide. On top of Kilimanjaro in 2005 with a copy of Tathyakendra magazine. Scanned from slide I first visited Africa (Tanzania to be specific) in 2005. I hiked Kilimanjaro and came back home. It was just a tourist thing I did. But in spite of being wrapped up in an itinerary and a travel package of all things touristy; something very curious happened. I got even more inquisitive about Africa. I wanted to go back to Africa. Not as a tourist, but as a drifting wanderer, living an ever curious life. But for that I had to wait a good seven years. In 2011, while I was exploring the barriers of the Nanda Devi Sanctuary in ...

To the Mountains of the Moon: A Journey from Fiction to Facts

In 1937, Bibhutibhushan Bandyopadhyay chronicled the adventures of a Bengali boy named Shankar. This novel was named 'Chander Pahar' (English: 'Mountains of the Moon', as the fiction refers to a range of mountains and not a single standing mountain). 'Chander Pahar' went on to become one of the most loved adventure stories in the Bengali literature. In his lifetime, Bibhutibhushan wrote 16 novels and over 200 short stories. Interestingly, even though most of Bibhutibhushan's works were largely set in rural Bengal; in this particular novel the writer chose the setting of 1909 Africa. Bibhutibhushan Bandyopadhyay (1894-1950) In the story 'Chander Pahar', our protagonist Shankar gets a lucky break to go out from his little riverside village in Bengal to work for the Uganda Railway. Thus begun his sudden and long journey from the mundane to the extraordinary. A roller coaster ride through adventures involving the infamous man eating lions of Tsav...

Straight from a Story Book: Part I

It all started with a story book. In 1937, Bibhuti Bhushan Bandyopadhyay , one of the leading writers of modern Bengali literature penned ' Chander Pahar '. It is a story of a 22 year old young man from rural Bengal who sets out to Africa on an adventure of a lifetime in 1909. (If you have not read the book already you can read the plot summary here: https://en.wikipedia.org/wiki/Chander_Pahar ) Like millions of Bengali readers I had read this adventure story when I was a kid and then as I grew up, as indicated by its publisher (juvenile literature); it became a thing of the past, a childhood fantasy for me.  It is only in recent years, after I climbed Kilimanjaro (2005), I picked up 'Chander Pahar' again. It is then, the book started opening new meanings and fresh directions for me. It is then I began to understand the meaning of the Swedish proverb- 'In a good book the best is between the lines' .  My repeated readings of 'Chander Pah...