লকডাউন স্বগতোক্তি ১
লকডাউন স্বগতোক্তি ১
লকডাউনের বাজারে, দিন কয়েক আগে, হোয়াটসঅ্যাপে একটা মেসেজ পেলাম। ব্যক্তব্য, ‘এই দূর্দিনে শেরপারা বড় কষ্টে আছেন। তাঁদের সব অভিযানের কাজ আপাতত মুলতুবি হয়ে গেছে। আমরা কি তাঁদের জন্য কিছু সাহায্য যোগাড় করে দিতে পারিনা?’
কালাহারি বুশম্যান শিশু। নেট থেকে পাওয়া ছবি। আমার তোলা নয়। |
লকডাউনের বাজারে, দিন কয়েক আগে, হোয়াটসঅ্যাপে একটা মেসেজ পেলাম। ব্যক্তব্য, ‘এই দূর্দিনে শেরপারা বড় কষ্টে আছেন। তাঁদের সব অভিযানের কাজ আপাতত মুলতুবি হয়ে গেছে। আমরা কি তাঁদের জন্য কিছু সাহায্য যোগাড় করে দিতে পারিনা?’
ব্যক্তব্যের সঙ্গে আমি সম্পুর্ণ একমত হয়েও কিছু জবাব দিতে পারিনি আজও। কারণ, আমার নামের পিছনে শেরপা
কিংবা কোনও পাহাড়ি পদবী না থাকলেও, কাজটা আমি একই করি। হিমালয়ে
অভিযানে গিয়ে শেরপারা যা করে থাকেন, ঠিক তাই। গত বিশ বছর ধরে করি। এ
বছরের সব কাজ আমারও চলে গেছে। অন্তত এই মুহুর্তে তাই মনে হচ্ছে।
তবে, সত্যি কথা বলতে কি, কিছুটা দুশ্চিন্তা হলেও, নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে না। কারণ, আমি জানি, আমি ভারতবর্ষ, তদোপরি বাঙালিস্তানে
জন্মেছি। প্রফেশনাল অ্যাডভেঞ্চারিস্টরা এখানে জন্মানোর আগেই মারা যান। কিন্তু, আমি তো মারা যাই নি। গত দু দশক ধরে, স্বতন্ত্র, স্বাবলম্বী ভাবে ওরিজিনাল কিছু অ্যাডভেঞ্চার করেছি এবং আগামী দিনেও কিছু করে যাব। আমার নিজের অস্তিত্বের সঙ্গে মুখুজ্যে বামুন ইত্যাদি ব্যাপার স্যাপার আমার চিরকালই বেশ জঘন্য মনে হত। মনে হত এর থেকে কালাহারির বুশম্যান কিংবা সাহারার তুয়ারেগ হওয়া ঢের ভাল ছিল।
তবে, এই পোস্ট দেখে আমার একটা পুরনো বিশ্বাস আরও দৃঢ় হল। সেটি হল, বাঙালি ছিঁচকাঁদুনে ছাড়া আর বেশী কিছু কোনদিনই ছিলনা, আজও নেই। তাই জন্যই বাঙালির পর্বতারোহণ আসলে একটি সোনার পাথর বাটি। শেরপাদের তাঁরা যে আসলে কী চোখে দেখেন এবং অভিযানে কী ভুমিকায় ব্যবহার করেন সেটা আমার জানা আছে। তাই, এটাও জানি যে, শেরপারাও বাঁচবেন, বাঙালির কুম্ভীরাশ্রু ব্যতিরেকেই বাঁচবেন।
তাই এমনিই লিখলাম, সলিলোকি আফটার অল। আপনারা সিমপ্যাথি কার্ড খেলতে থাকুন। পরিস্থিতি বেশ জমে
উঠেছে। আর আমার জন্য ভাববেন না, ভাবার ভান করবেন না, আহা উহু করবেন না।
জীবনের
স্লগ ওভার শুরু হয়েছে। চালিয়ে খেলব এমনিতেই। এফ ইউ।
Comments