Skip to main content

পেনসি লা-র সেই রাত


এই লেখাটি গত ১১ই আগস্ট, ২০১৯, সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল 'তারার গ্রাসে মোড়া তুষারতীর্থ' নামে। নীচের লেখাটি পড়ার আগে কাকাবাবুর সঙ্গে অমরনাথে  পড়ে নিলে এই  গল্পটা বুঝতে একটু সুবিধা হবে। 


আমাদের ছোটবেলায় একটা সিনেমা এসেছিল, ‘তুষারতীর্থ অমরনাথ’। সেই থেকে, কেন জানিনা, অমরনাথ নামটা শুনলেই সবকিছুর আগে আমার আজও সেই ছায়াছবির কথাই মনে পড়ে। এমনকি অমরনাথ নামের কোনও ভদ্রলোকের সঙ্গে কোথাও আলাপ হলেই, মনে মনে তার নামের আগে প্রিফিক্স হিসেবে ‘তুষারতীর্থ’ তৎক্ষণাৎ বসিয়ে দেবার একটা বিচ্ছিরি অভ্যেসও আজকাল দেখা দিয়েছে। তবে যেহেতু, এই উপাধী দেওয়ার আনুষ্ঠানিক ব্যাপারটা সাধারণত ঘটে আমার মনের মধ্যে, তাই প্রত্যেকবারই অপ্রস্তুত হওয়া থেকে আমি এবং সেই ব্যক্তি-দুজনেই বেঁচে যাই। নস্টালজিয়া যে সময় বিশেষে মানুষকে নষ্ট, থুড়ি, ননসেন্সিকাল করে দিতে পারে তার চলমান প্রমাণ আমি নিজেই। অথচ অমরনাথ যাত্রা বলতে আজকাল যেটা বোঝায় সেটা কিন্তু আমার জীবনে একবারই ঘটেছিল, তাও পাক্কা তিরিশ বছর আগে, আমার কাকাবাবুর সঙ্গে।

বাংলা সাহিত্য এবং সিনেমায়, তীর্থযাত্রা এবং তার পুণ্যলোভাতুর যাত্রী বলতে ঠিক যে ছবিগুলো আঁকা রয়েছে, তার কোনও ছাঁচেই আমি কাকাবাবুকে কোনদিন ফেলতে পারিনি। আমার বয়স তখন সদ্য আঠারো। পায়ে হান্টার জুতো আর পিঠে রুকস্যাক নিয়ে মাউন্টেনিয়ার কাকাবাবুর সঙ্গে হিমালয়ে গিয়েছিলাম আমি সময়টা ভাবুন একবার! বাড়ি ছাড়ার পর থেকেই আড় চোখে লক্ষ্য করছিলাম কাকাবাবুর রুকস্যাক পিঠে হাঁটার স্টাইল। অনুকরণও করছিলাম হুবহু। কাকাবাবু যা বলছিলেন, তা গিলছিলাম গোগ্রাসে। কখনও ডাল লেকের পাড়ে বসে ভেড়ার মাংসের শিক কাবাবে কামড় দিয়ে শুনছিলাম সেন্ট্রাল এশিয়া থেকে কাশ্মীরে তাবাক-মাজ চলে আসার খুশবুদার গল্প আবার কখনও লিডার নদীর ধারে দাঁড়িয়ে শুনছিলাম, স্যার জন হান্টের কোলাহোই শৃঙ্গে ব্যর্থ অভিযানের খুঁটিনাটি অমরনাথ গুহার পথে যত এগিয়েছিলাম, এরিক শিপটন এর অভিযান, গুলোল গলি গিরিপথ পার হয়ে কাকাবাবুদের জান্সকার ট্রেক করার মতলব, আর চন্দনওয়াড়ির ঘোড়াওয়ালা মকবুল চাচার অট্টহাসি কোথায় যেন মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছিল কখনও পুরনো গল্পের আমেজে, কখনও হাঁটার সময় নতুন বন্ধু পাবার রোমাঞ্চে, আমি এক নতুন জীবন দর্শন পেয়েছিলাম হিমালয়ের আত্মা যে কেবল দেবতাদের জন্য সংরক্ষিত নয় তা হয়ে উঠেছিল ক্রমশ সুস্পষ্ট

আজ বুঝতে পারি, সেবারেই, হিমালয় অভিযানের ইতিহাস এবং তাকে বারবার নতুন করে আবিষ্কারের এক রোমাঞ্চময় ঠিকানার খোঁজ পেয়েছিলাম আমি। সেই আবিষ্কারের আনন্দে ম্লান হয়ে গিয়েছিল তীর্থপথের ধুপ-ধুনো, খোল-কর্তাল, জয়ধ্বনি এবং ভক্তির বন্যা। হাজারে হাজারে তীর্থযাত্রীর, মন্ত্রমুগ্ধের মত, পুণ্য নামের কোন এক অজানা বস্তুর লোভে পাহাড়ি পথ ভাঙা এবং গুহার মধ্যে এক বিশাল আইস-স্ট্যালাগমাইটের সামনে তাদের সাষ্টাঙ্গ প্রনাম, আলাদা করে আমার মনে কোনও ছাপ ফেলতে পারেনি। তাই, সেবার পহলগাম, চন্দনওয়াড়ি, শেষনাগ, মহাগুনাস টপ, পঞ্চতরনী হয়ে অমরনাথ গুহার পথ কোথা দিয়ে যে কেটে গিয়েছিল, তা টেরও পাইনি। এই ঘটনার প্রায় দুদশক পরে আরও একবার গিয়েছিলাম কাশ্মীর। কাকাবাবু তখন আর বেঁচে নেই। তবে পিঠে রুকস্যাক এবং পাশে আমার বন্ধু আব্বাস থাকলেও, কাকাবাবু মনের মধ্যেই ছিলেন সেটা ছিল দুই বাল্যবন্ধুর শু-স্ট্রিং বাজেটের এক ব্যাকপ্যাকিং ট্রিপ।


শ্রীনগর থেকে গুলমার্গ, দুরত্ব বেশী না হলেও, পৌঁছতে সারাদিন লেগে গিয়েছিল। একটি আর্মি ট্রাক এবং যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের জেরে প্রায় সারাদিন আমরা আটকে ছিলাম রাজপথে। গুলমার্গ পৌঁছে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা গেছিল। পরদিন ভোররাতে ফজরের আজানের ডাকে ঘুম ভেঙেছিল। সারাদিন ঘুরে বেরিয়েছিলাম গুলমার্গের বিখ্যাত স্কি রিসর্টের আশেপাশে। গ্রীষ্মের স্কি রিসর্টে সবুজের গালিচা মুড়ে রেখেছিল চারদিকের পাহাড়ের ঢাল। বরফ না থাকলেও স্কি লিফটটা চলছিল। আমরা দুজনে সেই লিফটে চেপে বেশ কিছুটা উঁচুতে উঠে দেখতে চেষ্টা করেছিলাম ‘কিলার মাউন্টেন’ নাঙ্গা পর্বতকে। সেই নাঙ্গা পর্বত, যাকে ১৯৫৩ সালে, একা আরোহণ করে ফেরার সময় সারারাত একটা পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে কাটিয়েছিলেন প্রবাদ প্রতিম অস্ট্রিয়ান অভিযাত্রী হারমান বুল। সেই নাঙ্গা পর্বত, যেখানে  হালে, ২০০৫ সালে, বিখ্যাত স্লোভেনিয়ান ক্লাইম্বার টোমাজ হুমার অ্যাভালাঞ্চে আটকে পড়েও, বেঁচে ফিরেছিলেন ৬ দিন নিখোঁজ থাকার পরসকালের দিকে একটা মন খারাপ করা কুয়াসা ছিল। একটু বেলার দিকে, অনেকটা যেন আমাদের আশা মেটাতেই, মেঘের স্তরের অনেক ওপরে অনেকটা স্বপ্নের মত দেখা দিয়েছিল নাঙ্গা পর্বত, যার আর এক নাম দিয়ামির। আমায় একেবারে অবাক করে দিয়ে আব্বাস জানিয়েছিল, ডিসি কমিকসের ইউনিভার্সেও নাকি এই নাঙ্গা পর্বত অনুপ্রাণিত এক কাল্পনিক শহর রয়েছে। সেখানে তার নাম অবশ্য ‘নান্দা’ পর্বত, আর সেই শহরে পৌছতে গেলে প্রয়োজন হয় এক অদৃশ্য মানচিত্রের

পরদিন দুজনে সোনামার্গ পৌঁছনোর পর, অদৃশ্য নয়, দৃশ্যমান পকেট মানচিত্র নিয়েই হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। লক্ষ্য ছিল থাজিওয়াস গ্লেসিয়ার। পুরনো এক পাহাড়ি জার্নালে পড়েছিলাম, ১৯৩৩ এর জুন মাসে, জন্সটন, হ্যারিসন এবং ওয়াটস নামের তিন ব্রিটিশ অভিযাত্রীর এই থাজিওয়াস হিমবাহে অ্যাডভেঞ্চারের কথা। থাজিওয়াস উপত্যকাকে তাঁরা উল্লেখ করেছিলেন ‘ভ্যালি অফ গ্লেসিয়ার্স’- ‘হিমবাহের উপত্যকা’ নামে। ওয়াটস লিখেছিলেন, ক্লাইম্বিং এর নির্মল আনন্দ ছাড়াও এই উপত্যকার প্রাকৃতিক দৃশ্যের কোনও তুলনাই নেই। আমি আর আব্বাস যেদিন থাজিওয়াস পৌঁছেছিলাম, ঘটনাচক্রে সেটাও ছিল জুন মাসঘোড়ার পিঠে সওয়ার কয়েকশো টুরিস্টের ভিড় এবং অগণিত ক্যাম্প পার হয়ে পথের শেষে পৌঁছে ‘ভ্যালি অফ গ্লেসিয়ার্স’ এর বর্তমান হালত দেখে মন ফুরফুরে হবার বদলে বেশ দমে গিয়েছিল। প্লাস্টিকের বোতল আর চিপসের প্যাকেটের স্তুপ পাশে রেখে নির্লিপ্ত উল্লাসে ছবি তুলে চলেছিল দলে দলে ভারতীয় পরিবার। দুজনেই একটা বিষয়ে সেদিন একমত হয়েছিলাম- ঠিক এখানেই যদি একটা মন্দির বা মসজিদ থাকত, তাহলে হয়ত জায়গাটা এতটা নোংরা হত না। ভুত কিংবা ভগবান- এই দুজনের কেউ একজন মাথার ওপর ঠ্যাং ঝুলিয়ে বসে ভয় না দেখালে, ভারতবাসীর শখের প্রাণ আসলে ধাপার মাঠ

পরদিন রাস্তায় অমরনাথ যাত্রার প্রবল যানজটে বেশ কয়েকঘন্টা আটকে থাকার পর আমাদের গাড়ি ধরেছিল জোজি-লার রাস্তা একের পর এক হেয়ার-পিন বেন্ড এবং আরও বেয়াড়া ধরণের কিছু সুইচ-ব্যাক পার হয়ে অবশেষে পৌঁছেছিলাম ঐতিহাসিক গিরিপথ জোজি-লার মাথায়। কোথায় যেন পড়েছিলাম যে, ১১৭৫০ ফুট উচ্চতায় জোজি-লাই হল গ্রেট হিমালয় রেঞ্জের সবথেকে নিচু গিরিপথ। জোজি-লায় জিওলজি এত ক্ষমাশীল কেন, তা মাথায় না ঢুকলেও, ইতিহাস বলছিল, এই জোজি-লাতেই  বিশ্বের উচ্চতম ট্যাঙ্ক যুদ্ধের রেকর্ড গড়ে ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের সেনাকে নাস্তানাবুদ করে পিছু হটতে বাধ্য করেছিল ভারতীয় সেনা। ১৯৩৮ সালে এই পথ ধরেই কে-টু অভিযানে গিয়েছিলেন চার্লি হাউস্টন সহ অন্য মার্কিন অভিযাত্রীরা এবং তারও সাতশো বছর আগে এক বিশাল অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে ভারতে প্রবেশের পথ নিজের চোখে দেখতে এসেছিলেন চেঙ্গিস খান। কারগিল যুদ্ধের ছায়াপথ ধরে এসেছিল দ্রাস, টুলুলিং সন্ধের আগেই পৌঁছে গিয়েছিলাম কারগিল বালটি বাজারের গলিতে ঠেলাগাড়িতে বিক্রি হচ্ছিল কাবাব অবাক লাগছিল এই ভেবে যে, লাইন অফ কন্ট্রোল খুব কাছেই এবং সবসময় দুইদেশের কয়েকশো চোখ এবং বন্দুক তাক করে আছে একে অপরের দিকে কিছু মানুষের অঙ্গুলিহেলনে আকস্মিকভাবেই সবকিছু বদলে যেতে পারে একটা অস্বস্তিকর ভ্যাপসা গরম হাওয়া উঠে আসছিল সুরু নদীর বুক থেকেসময় নষ্ট না করে আমরা দুই বন্ধু সস্তার একটা হোটেল খুঁজেছিলাম আর ভেবেছিলাম হয়ত কোনদিন আনন্দ ছিল এ শহরে।


পরদিন সাতসকালে ব্যাগ-বস্তা পিঠে নিয়ে দুজনে বাজারে এসে দাঁড়াতেই অযাচিত ভাবেই লিফট পেয়েছিলাম জান্সকার গামী এক ভদ্রলোকের গাড়িতে। ভদ্রলোক জান্সকারি, নাম বলেছিলেন রিগজিন। বলেছিলেন, একাই ফিরতাম পদম, ভালই হল দুজন সঙ্গী জুটল পথের। দুজন মিলে যা ইচ্ছে দিও। রংদুম গোম্পা পার হবার পর পেনসি লার মাথায় পোঁছতে কিছুক্ষনের জন্য থেমেছিল রিগজিনের গাড়ি। আমরা দুজন হাঁ করে দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম দ্রাং দ্রুং হিমবাহের বিস্তার। চোখের সামনে তেইশ কিলোমিটার জুড়ে শুয়ে ছিল এক অপূর্ব সুন্দর হিমবাহ। হিমবাহের শেষপ্রান্তে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল ডোডা শৃঙ্গ। কয়েক মিনিট লেগেছিল মনস্থির করতে।

সেদিন পদম যাবার সিদ্ধান্ত বদলে রিগজিনকে ধন্যবাদ এবং বিদায় জানিয়ে নিজেদের স্যাক গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়েছিলাম আমরা। গাড়ির রাস্তা থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে লাগিয়েছিলাম বয়ে আনা ছোট তাঁবু। বিকেল গড়িয়ে কখন যে সন্ধ্যা নেমেছিল আমরা বুঝতেই পারিনি। প্রকৃতির মন্ত্রে মুগ্ধ তখন আমরা দুজন। তারায় ভরে উঠেছিল সেই রাতের আকাশ- ঠিক যেন কবির ভাষায় ‘স্টার ইটেন ব্ল্যাংকেট অফ দি স্কাই’। তারার আলোয় এক অদ্ভুত মায়াবী ছায়াছবি ফুটে উঠেছিল দ্রাং দ্রুং হিমবাহের অবয়ব জুড়ে সেই মুহুর্তে বিশ্বের সমস্ত মন্দির, মসজিদ, গোম্পা, কিংবা গির্জার স্থাপত্য-ভাস্কর্য্য এবং আরোপিত মাহাত্ম্য তার কাছে তাৎপর্য হারিয়েছিল। তার দিকে আমরা নিবিষ্ট হয়ে চেয়েছিলাম। চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। খেটেখুটে তৈরি করা কফি কখন ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল কেউ টের পাইনি। পরদিন সকালে দ্রাং দ্রুং হিমবাহের সামনে ‘তুষারতীর্থ’ প্রিফিক্স হিসেবে জুড়ে দিতে তাই একটুও দ্বিধা হয়নি।
-------------------              
      

Comments

Popular posts from this blog

Across The Sahara on a Bicycle

Across The Sahara on a Bicycle Between the things we get And the things we celebrate Flows a desert                            Lest we forget. #SaharaQuartet Background: My Africa My first exposure to the real Africa in 2005 after climbing Kilimanjaro. Scanned from slide. On top of Kilimanjaro in 2005 with a copy of Tathyakendra magazine. Scanned from slide I first visited Africa (Tanzania to be specific) in 2005. I hiked Kilimanjaro and came back home. It was just a tourist thing I did. But in spite of being wrapped up in an itinerary and a travel package of all things touristy; something very curious happened. I got even more inquisitive about Africa. I wanted to go back to Africa. Not as a tourist, but as a drifting wanderer, living an ever curious life. But for that I had to wait a good seven years. In 2011, while I was exploring the barriers of the Nanda Devi Sanctuary in ...

To the Mountains of the Moon: A Journey from Fiction to Facts

In 1937, Bibhutibhushan Bandyopadhyay chronicled the adventures of a Bengali boy named Shankar. This novel was named 'Chander Pahar' (English: 'Mountains of the Moon', as the fiction refers to a range of mountains and not a single standing mountain). 'Chander Pahar' went on to become one of the most loved adventure stories in the Bengali literature. In his lifetime, Bibhutibhushan wrote 16 novels and over 200 short stories. Interestingly, even though most of Bibhutibhushan's works were largely set in rural Bengal; in this particular novel the writer chose the setting of 1909 Africa. Bibhutibhushan Bandyopadhyay (1894-1950) In the story 'Chander Pahar', our protagonist Shankar gets a lucky break to go out from his little riverside village in Bengal to work for the Uganda Railway. Thus begun his sudden and long journey from the mundane to the extraordinary. A roller coaster ride through adventures involving the infamous man eating lions of Tsav...

Straight from a Story Book: Part I

It all started with a story book. In 1937, Bibhuti Bhushan Bandyopadhyay , one of the leading writers of modern Bengali literature penned ' Chander Pahar '. It is a story of a 22 year old young man from rural Bengal who sets out to Africa on an adventure of a lifetime in 1909. (If you have not read the book already you can read the plot summary here: https://en.wikipedia.org/wiki/Chander_Pahar ) Like millions of Bengali readers I had read this adventure story when I was a kid and then as I grew up, as indicated by its publisher (juvenile literature); it became a thing of the past, a childhood fantasy for me.  It is only in recent years, after I climbed Kilimanjaro (2005), I picked up 'Chander Pahar' again. It is then, the book started opening new meanings and fresh directions for me. It is then I began to understand the meaning of the Swedish proverb- 'In a good book the best is between the lines' .  My repeated readings of 'Chander Pah...